নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তপ্ত আবহাওয়া ও চলমান লোডশেডিংয়ের কারণে ঢাকার নগরজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। রাজধানীতে গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে।
আবার কোনো কোনো এলাকায় আরও বেশি। শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন অন্যরাও। ২ জুন শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় বাস করেন বেসরকারি চাকরিজীবী শেখ মো. আবুল কালাম। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শেওড়াপাড়া-কাজীপাড়া এলাকায় সারা দিনে ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের কথা বলে, কিন্তু আমরা তো দেখি না।
মহাখালীর দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা তানভীর কামাল। পড়াশোনা শেষ করে আছেন চাকরির সন্ধানে। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন একে তো তাপমাত্রা অতিরিক্ত; তার ওপর মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং। অনেকে মিলে একটা বাসায় থাকি। হাঁসফাঁস অবস্থা হয়ে যায় আমাদের।
উত্তরার বাসিন্দা রিয়াজ মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, আগে লোডশেডিং তেমন হতো না। গত কয়েকদিন ধরে এত বেশি হচ্ছে চিন্তা করার মতো না। দিনে-রাতে মিলিয়ে ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়।
হেলাল শুভ থাকেন রাজধানীর শ্যামলীতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি লোডশেডিং নিয়ে। তিনি লিখেছেন- ‘রাত ১১টায় কারেন্ট গেছে, ২টায় একবার এলো, ৫ মিনিট পর আবার গেল। আধা ঘণ্টা পর আবার এলো। এর ৫ মিনিট পর আবার গেল। এভাবেই রাত পার। ঘেমে মেয়েটার ঠাণ্ডা লেগে গেছে। সব মিলিয়ে এক কঠিন যন্ত্রণার রাত ছিল আজকে। আমরা তো আবার কোনো রাগও দেখাতে পারবো না। বুললেই বুলবেন যে বুলছি…। কিন্তু যে উন্নয়নে মানুষ ঘুমাতেই পারে না, সেই উন্নয়ন দিয়া আমরা কী করিবো। ’
লোডশেডিংয়ের সঙ্গত কারণ হিসেবে জানা গেছে, তিন বছর আগে উৎপাদনে আসার পর এই প্রথম পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের। এর আগে ডলার সংকটে কয়লা না কিনতে পারায় রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রও দুই দফা বন্ধ হয়েছিল।
পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের একটি ২৫ মে বন্ধ করা হয়। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাকি আরেকটি ইউনিট চলবে ২ জুন পর্যন্ত। কয়লা না থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হবে দেশের বৃহত্তম এ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দেশে ১ থেকে ২টি বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু (৩৬-৩৮ক্ক সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৩৮-৪০ক্ক সেলসিয়াস) ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ফলে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকতে পারে। এ সময় বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের কোনো আভাস নেই।