বাংলাদেশ ইডেনে গোলাপি উৎসবের দুয়ারে

‘সিটি অব জয়’খ্যাত কলকাতা এখন গোলাপি শহর। গোলাপি আবহ শহরের বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে। সুউচ্চ ৪২ তলা ভবন থেকে শুরু করে শহরের রাস্তা-ঘাটেও যার ছাপ রয়েছে। ইডেন গার্ডেন্সের সম্মুখপানে আসলেই দিবারাত্রির টেস্টের পরিবেশটা আরো স্পষ্ট হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় কভারে ঢেকে ফেলা হয়েছে মাঠ। এক চিলতে সবুজ গালিচা খোলা রাখা হয়েছিল, ফ্লাডলাইটের আলোয় সেখানেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতার মহড়াও হয়ে গেল।

এতসব আয়োজন শুধু বাংলাদেশ-ভারত দ্বিতীয় টেস্টকে কেন্দ্র করে। এই ম্যাচের মধ্য দিয়েই আজ দিবারাত্রির টেস্ট ইতিহাসে নাম লেখাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত। কলকাতায় আজ ম্যাচ শুরু হবে স্থানীয় সময় ১টায়। ইন্দোরে মাত্র তিন দিনে প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে আছে স্বাগতিকরা।

ক্রিকেটের ঐতিহাসিক এই মাহেন্দ্রক্ষণের মহিমা অনেকগুণ বেড়ে যাচ্ছে ম্যাচটাকে ঘিরে দুই দেশ একাত্ম হয়ে যাওয়ায়। আজ ইডেনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘণ্টা বাজিয়ে উদ্বোধন করবেন ইডেন টেস্টের। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকছে বড়ো বহর। ম্যাচ উপভোগ করতে গতকাল সন্ধ্যায় কলকাতা চলে এসেছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

হেলিকপ্টার থেকে দুই প্যারাট্রুপার মাঠে নেমে এসে গোলাপি বল তুলে দেবেন মুমিনুল হক ও বিরাট কোহলির হাতে। টসের পর্ব শেষে মাঠে গড়াবে ২২ গজের লড়াই।

মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতিতে ২০০১ সালে ইডেনে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট নিয়ে আলোচনা করবেন শচীন টেন্ডুলকার, ভিভিএস লক্ষণ, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়রা। চা বিরতিতেও থাকছে অনেক আয়োজন।

২০০০ সালে অভিষেক টেস্টে ভারতের বিরুদ্ধে খেলা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা থাকছেন ইডেনের মহা আয়োজনে। নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের নেতৃত্বে এরই মধ্যে অনেকেই পা রেখেছেন কলকাতায়। অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান ও বর্তমানে আইসিসির কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বুলবুল, নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আল-শাহরিয়ার রোকন ছাড়া সবারই উপস্থিত থাকার কথা ইডেনের আয়োজনে। রাতে প্রথম দিনের খেলা শেষে ঐ ম্যাচে ভারত-বাংলাদেশের একাদশে থাকা ক্রিকেটাররা সংবর্ধনা পাবেন। সংগীত পরিবেশন করবেন রুনা লায়লা, জিত্ গাঙ্গুলিরা।

এলাহি সব আয়োজন শুধু ২২ গজের লড়াইকে কেন্দ্র করে। আগের টেস্টে হারলেও শীর্ষ র্যাংকধারী ভারতের বিরুদ্ধে ইডেনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে চায় বাংলাদেশ। দলসূত্রে প্রাপ্ত খবর, ইডেনে তিন পেসার নিয়ে খেলতে নামবে মুমিনুল বাহিনী। একাদশে তাই পরিবর্তন আসছেই। এদিকে ইডেনের উইকেটের ঘাস ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। ম্যাচটা চারদিন স্থায়ী হোক এমনটাই চাওয়া আয়োজকদের।

দুই দলের শক্তিমত্তার ব্যবধান সবারই জানা। ইন্দোরে ইনিংস ব্যবধানে হারলেও ইডেনে জয়ের লক্ষ্য থেকে কক্ষচ্যুত হচ্ছে না বাংলাদেশ। গতকাল ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক বলেছেন, ‘আমি যখনই মাঠে নামব, জেতার জন্যই খেলব। প্রথম টেস্টে যে ভুলগুলো করেছিলাম, সেই ভুলগুলো আমি যত করা যায় সেই চেষ্টা করব। ব্যাটসম্যানরা সেশন বাই সেশন ব্যাটিংয়ের চেষ্টা করব, বোলাররাও সেশন ধরে ধরে ভালো বোলিংয়ের চেষ্টা করবে।’

কোহলির দলটার মুখোমুখি হওয়া বিশ্বের প্রতিটি দলের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ। ইন্দোরে পা হড়কালেও ইডেনে গোলাপি বলের ক্রিকেটে ভিন্ন কিছু করে দেখাতে চায় বাংলাদেশ।