প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের’ মামলায় শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর বৃহস্পতিবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা জয়ের গোপন তথ্যের জন্য এফবিআইএর এক কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার অপরাধে আট বছর আগে সিজারকে সাজা দেয় নিউ ইয়র্কের একটি আদালত। এরপর ২০১৫ সালে ঢাকার পল্টন থানায় এ মামলা দায়ের করে পুলিশ।
২০১৮ সালে গোয়েন্দা পুলিশ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিলে তাদের বিচার শুরু করে আদালত। সজীব ওয়াজেদ জয়কে ২০২২ সালের নভেম্বরে আদালতে গিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যও দেন।
বৃহস্পতিবার আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচারক রায় ঘোষণা করেন। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবদুর রহমান খান কাজল আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের বলেন, অপহরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায়ে আসামিদের সবাইকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও এক মাসের কারাভোগ করতে হবে।
একই আইনের ১২০-খ ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের দায়ে আসামিদের প্রত্যেককে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে রায়ে। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বিচারক রায়ে বলেছেন, আসামিদের দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে। ফলে তাদের সব মিলিয়ে ৫ বছরের সাজা খাটতে হবে।
অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরুর পর সজীব ওয়াজেদ জয়সহ মোট ১২ জন রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের কোনো আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ পাননি।
অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে উপস্থিত হয়ে ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর সাক্ষ্য দেন জয়। সেদিন তিনি কী বলেছিলেন, পরে তা সাংবাদিকদের জানান আইনজীবী নজিবুল্লাহ হিরু।
তিনি সেদিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টএমন্ট অব জাস্টিস থেকে ফোন পাওয়ার কথা সজীব ওয়াজেদ জয় তার সাক্ষ্যে বলেন।
“তিনি বলেন, এফবিআইয়ের দুই কর্মকর্তা তার সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ায় তিনি সেখানে যান। এফবিআই কর্মকর্তা জানতে চান রিজভী আহমেদ সিজার এবং মাহমুদউল্লাহ নামের কাউকে তিনি চেনেন কিনা? জয় বলেন, তিনি চেনেন না। পরে তারা প্রশ্ন করেন, শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমান নামের কাউকে চেনেন কিনা। সজীব ওয়াজেদ জয় উত্তরে বলেন, তাদের ব্যক্তিগতভাবে না চিনলেও নাম জানেন।
“তখন এফবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা তাকে বলেন, তারা একজনকে আটক করেছেন, তিনি এফবিআই এজেন্ট রর্বাট লাস্টিক। তিনি রিজভী আহমেদ সিজার গংদের কাছ থেকে ৪০ হাজার ডলার ঘুষ নিয়েছেন টাইম টু টাইম সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্যক্তিগত তথ্য, তার অবস্থান জানানোর জন্য এবং প্রতিমাসে আরো ৩০ হাজার ডলার পাবেন বলে সিজারদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।”
জয়ের জবানবন্দির বরাতে নজিবুল্লাহ হিরু বলেন, “সিজারকে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার করার পর তিনি এফবিআইকে বলেন যে জয়ের ব্যক্তিগত তথ্য তারা নিচ্ছেন জয়কে অপহরণ করে হত্যা করার জন্য। পরে এফবিআই জানায়, সিজারদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং জয়কে সেখানে সাক্ষ্য দিতে হবে। তখন জয় তাদের বলেন, তিনি যা জানেন, সেটা আদালতে বলবেন। পরে জয় মার্কিন আদালতে সাক্ষ্য দেন, সেখানে সিজারদের সাজা হয়।”
জয় আদালতে বলেন, “এর আগেও এফবিআই আমাকে সতর্ক্ করে দিয়ে বলেছিল যে আমার জীবনের উপরে যে কোনো সময় আঘাত আসতে পারে, সতর্ক থাকতে হবে। তারা বাসার সামনে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরমার্শ্ দেয়। তারা বলে, যে কোনো বিপদ দেখলে যেন তাদের জানাই। আমি বাসার সামনে অনেক অপরিচিত, অচেনা লোককে ঘোরাফেরা করতে দেখেছি। পরে আমি বাসা পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যাই।”