1. [email protected] : maruf :
  2. [email protected] : shishir :
  3. [email protected] : talha : Md Abu Talha Rasel
২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ| ১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ| শরৎকাল| সোমবার| দুপুর ১২:২০|

ছেলেডা আমাদের অপরাধী বানাইয়া দিছে, এমন ছেলে যেন কোনো মায়ের পেটে জন্ম না হয়

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩
  • ৫৮ Time View

মাদারীপুরে জঙ্গি সন্তানকে নিজেদের বুকে আর ফেরাতে চান না মা-বাবা। চীন থেকে পড়ালেখা শেষে বাংলাদেশে এসে মা-বাবা সঙ্গে ছয় দিন ছিলেন প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ওরফে মুন্না (২৩)। হঠাৎ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন তিনি। পরে মেহেদীকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ খবরে হতবাক তার পরিবার ও এলাকাবাসী। পরিবার ও এলাকাবাসী বিশ্বাসই করতে পারছে না মেধাবী ছাত্র জঙ্গি দলের সদস্য।

মেহেদীর বাবা রেজাউল করিম মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব চিড়াইপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের গাড়ি চালক। চাকরির সুবিধার্থে রেজাউল করিম তার স্ত্রী দিনারা মমতাজকে সঙ্গে নিয়ে থাকেন শহরের ইটেরপুল এলাকায়। এ দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মেহেদী হাসান।ছোট ছেলে ঢাকার বাংলা কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বড় ছেলে মেহেদী হাসানের এমন দেশবিরোধী কাজে দিশেহারা-রেজাউল মমতাজ দম্পতি। তারা দুজনই তাদের সন্তানকে আর ফেরাতে চান না।

শনিবার (১৯ আগস্ট) শহরের ইটেরপুল এলাকায় রেজাউল করিমের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, মেহেদীর মা দিনারা মমতাজ ঘরে শয্যাশায়ী। বাবা সোফায় বসে দুশ্চিন্তায় মগ্ন। তাদের ছোট্ট ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মেহেদীর শিক্ষা জীবনের সব স্মৃতি। ছেলে মেহেদীর কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা দিনারা মমতাজ। বলতে থাকেন তাদের কষ্টের কথা।

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটা চীন থেকে দেশে আসছে, বিয়া করামু। মেয়েও দেখছি। কত স্বপ্ন আর আশা ছিল বুকে। সব শেষ হইয়া গেলো। ও যে কাজটা করেছে, তার জন্যে কারো কাছে মুখ দেখানোর জায়গা নাই। আমার ছেলেডা আমাদের অপরাধী বানাইয়া দিছে। হায় আল্লাহ, এমন ছেলে যেন আর কোনো মায়ের পেটে জন্ম না হয়।’

মেহেদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রেজাউল করিম চাকরি জীবনের দীর্ঘ সময় কেটেছে ঢাকায়। তার বড় ছেলে মেহেদীর জন্মস্থানও ঢাকায়। এ কারণে মেহেদীর ঢাকায় বেড়ে ওঠা। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করেন ঢাকায়। ২০১৫ সালে খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে এসএসসি পাস করেন। ২০১৭ সালে ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজ থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ৯২ নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর স্কালারশিপ নিয়ে চীনের ইয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে চলতি বছর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ভালো ফল নিয়ে স্নাতক পাস করেন। পড়ালেখা শেষে গত ৬ জুলাই চীন থেকে বাংলাদেশে আসেন মেহেদী। বিমানবন্দর থেকে নেমে তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে খিলগাঁও যান। সেখান থেকে মেহেদীর কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে চলে যান পাবনা। পরে গত ১১ জুলাই মেহেদী তার নিজ এলাকা মাদারীপুরে তার মা-বাবার কাছে আসেন। পাঁচ দিন মেহেদী তার মা-বাবার সঙ্গে কাটিয়ে হঠাৎ ১৭ জুলাই বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এরপর ঢাকাসহ নানা স্থানে খোঁজখবর নেয়া হলেও মেহেদীর বাবা তার ছেলের কোন সন্ধান পায়নি। এক পার্যায় ছেলের সন্ধান চেয়ে ১০ আগস্ট মাদারীপুর সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন রেজাউল করিম।

এরপর ছেলে মেহেদী হাসান জঙ্গি দলের সদস্য হিসেবে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এই খবরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন রেজাউল করিম। আক্ষেপ আর হতাশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘অল্প টাকার বেতনে চাকরি করি। নিজের রক্ত পানি কইয়া বড় ছেলেডারে মানুষ করতে চেষ্টা করেছি। বড় ছেলেডা পড়ালেখা ভালো দেইখা, রাতদিন পরিশ্রম করে আয় করতাম। চীনে পাঠাইছি, পড়ালেখা শেষ কইরা দেশে আইসা ভালো চাকরি পাবে, আমাগো কষ্ট দূর হইবে। এমন কত আশা ছিল ওরে নিয়া। সব শ্যাষ কইরা দিলো। এখন আমার ছেলেকে আমি মৃত মনে করি। যে ছেলে দেশের জন্য ক্ষতিকর, খারাপ পথে চলে যায় তাকে আর ফিরাতে চাই না। আইন ওর সর্বোচ্চ শাস্তি দিক, সেটাই চাই।’

উল্লেখ্য, গত ১২ আগস্ট শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিসিটিভি) ইউনিট ছয় নারীসহ ১০ জনকে আটক করে। তাদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। এই ১৩ জনের মধ্যে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান একজন। তারা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে জানা গেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021