আকাশের নক্ষত্র।
অর্পিতা খুব ভালো ছাত্রী।পড়াশুনায় তার নাম ডাক আছে।এস.এস. সি, এইচ. এস. সি সে চমৎকার রেজাল্ট করেছে।বাংলাদেশে এ প্রথম গ্রামের কোন মেয়ে মানবিক বিভাগে জাতীয় পত্রিকায় পাতায় ছবি সহ তার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে।যা নিয়ে শুধু তার পরিবার নয় পুরো গ্রাম শুদ্ধো আনন্দের জোয়ারে ভাসছে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার অত্যন্ত ভালো মানুষ।অর্পিতার উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য যাতে কোনো বাধা না হয়।তার জন্য এক কালীন পঞ্চাশ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দিলেন।
অর্পিতা চট্টগ্রাম চকবাজারে বিশ্বাবিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে খুব ভালো প্রস্তুুতির সাথে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে।অন্য বন্ধু-বান্ধবীরা বিভিন্ন রকম আনন্দ ফুর্তি গল্প আড্ডাতে মেতে থাকলেও অর্পিতা এসব কিছুতে নেই।সে নিয়মিত পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভর্তি কোচিং প্রায় তিন মাস শেষে দিকে অর্পিতা লক্ষ করলো সব বন্ধু-বান্ধবীর একজন করে বয় ফ্রেন্ড গাল ফ্রেন্ড আছে।আর এটা থাকারও কারন আছে এতে করে একে অপরের সাথে শেয়ারিং কেয়ারিং করে অনেক অজানা কিছু সহজে জানা যায়।আর বিশ্বাবিদ্যালয়ের ভর্তির বিভিন্ন তথ্য মেয়েদের থেকে
ছেলেরা খোঁজ খবর একটু বেশি রাখে।
অর্পিতা চট্টগ্রাম বহদ্দারহাটে তার বোনের বাসা থেকে বিশ্বাবিদ্যালয় কোচিং করে।কোচিংয়ের শেষ দিন সবাই সবার সাথে কথা বলছে ভালো মন্দ শেয়ার করছে কে কোথায় কোথায় আবেদন করেছে এ সব বিষয়ে নিয়ে।অর্পিতা কারো সাথে কোন কথা বলছেনা।চুপচাপ এক কোণায় বসে রইলো।বিষয়টি লক্ষ করলো সেলিম স্যার।অত্যন্ত ভালো মানুষ ছাত্র-ছাত্রী যেকোন সমস্যা তার ব্যক্তিগত সমস্যার মনে করে যে কোনো বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন যদিও স্যার খুব কম কথা বলেন তবে মিষ্টভাষী।কোচিংয়ে তিনি ইংরেজি সাহিত্য পড়ান।তুমুল জনপ্রিয় শিক্ষক।সেলিম স্যার অর্পিতার সাথে সামান্য কিছু কথা বলেন। আর স্যারের নাম্বারটি রাখতে বলেন। যেকোন সমস্যা হলে কল দিতে জানাতে বললেন।
ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিতে অর্পিতা রাতে শ্যামলী গাড়ীতে উঠে পাশের সিটে বসা একটি ছেলেকে দেখে কিছুটা ভয় ভয় লাগছিলো।পরে আবার সে ভয় কেটে গেল। ছেলেটি ফোন করে মাকে বলছে মা গাড়ি পেয়েছি এখন ছেড়ে দিবে ।পৌঁছে কল দিব,আর পরীক্ষা হলে ডুকলে মোবাইল বন্ধ পেলে চিন্তা করিও না। রুমে মোবাইল নেওয়া নিষেধ থাকে।আর্শীবাদ করিও।অর্পিতা বুঝতে পারলো ছেলেটিও ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে।অর্পিতার খুব ইচ্ছা করছে ছেলেটির সাথে কথা বলতে কিন্তু কিভাবে যে বলবে।অর্পিতা মনে মনে বলতে লাগলো, এই ব্যাটা এতো ফুটানি দেখাও কেন?তোমার সামনে একটা মেয়ে অসহায় হয়ে বসে আছে। এই প্রথম ঢাকা যাচ্ছে তাও আবার একা একা আমার সাথে একটু কথা বলতে পারোনা।আমার নাম কি? কি করি?কোথায় যাবো?মনে হয় কোন অসামাজিক পরিবারের ছেলে,যখন আমার পরিচয় জানবে তখন বুঝতে পারবে।আমি যে সেই মেয়ে যার ছবি সহ জাতীয় পত্রিকায়, এ+ পেয়ে আমাদের গ্রাম থেকে যে নিউজ করে ছিলো।
ছেলেটি সারারাত কোন কথা বললো না।সকাল সাতটা দিকে ঢাকা সাইদাবাদ নেমে রিকসা নিয়ে ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় চলে গেল।মেয়েটিও তার পিছু পিছু গেল।
পরীক্ষা শেষে ছেলেটি চট্টগ্রাম ফিরবে হঠাৎ মেয়েটির সাথে দেখা। মেয়েটি বলল,দাদা কেমন আছেন?আপনার পরীক্ষা কেমন হলো?ছেলেটি বললো হ্যাঁ, মোটামুটি ভালো হয়েছে।আপনার কেমন হয়েছে?
আমারও মোটামুটি ভালো হয়েছে।দাদা আজকে তো চট্টগ্রাম ফিরবেন?
হ্যাঁ, আমি আজই ফিরবো।আপনি?
আমিও আজ ফিরবো।
তাহলে চলুন, একসাথে টিকিট করি।
হ্যাঁ, অবশ্যই। ছেলেটির সাথে সারারাস্তা অনেক কথা হলো একে অপরের চেনা জানা হলো। শুরু হলো নতুন এক প্রাণ স্বত্তার।ছেলেটি থাকে চান্দাগাঁ আবাসিকে।রিকসা থেকে বিদায় বেলা মেয়েটি বললো দাদা।আপনার নামটি জানা হয়নি।ছেলেটি বললো আমার নাম অমিত। আমি চান্দাগাঁ বোনের বাসায় থাকি।আমার গ্রামের বাড়ি রাংগামাটি বাঘাইছড়ি পাহাড়ী এলাকায়। আগে আমাদের সাজেক্কেকুল্লাই বলতো মানুষে এটা এখন বাংলাদেশর সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।দেশের যেকোন প্রান্তের মানুষ পাহাড়ের টানে, ইন্ডিয়ার বর্ডার, আর আকাশের মেঘরাশি দেখা জন্য সাজেক যায়।এটা কে বাংলার দারর্জিলিং বলা হয়।যা আমরা দেখতে দেখতে অভ্যাস্ত হয়ে গেছি।আমাদের দেখার তেমন কোন আগ্রহ নেই।অমিতের এক নিঃশ্বাসে এতো গুলো কথা শুনে হেঁসে পেললো অর্পিতা।ঠিক আছে দাদা, তুমি আমাকে একদিন সাজেক দেখাতে নিয়ে যাবে কিন্তু!
আমি অপেক্ষায় রইলাম!এই বলে তারা বিদায় নিলো একে অপরে যে যার মতন।
এর পর থেকে অমিতের গুরু দায়িত্ব অর্পিতা কে বিভিন্ন বিশ্বাবিদ্যালয়ের ভর্তির পরীক্ষা জন্য নিয়ে যাওয়া।দুজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হলো একে অপরের সুখ দুঃখ গুলো শেয়ার করে।মাঝে মাঝে বিকাল বেলা ঘুরতে বের হয়।একজন আরেক জনের সাথে দেখা না হলে মিস করে।এই মিস করা স্বভাবটা এক ধরনের মায়া।এ মায়ায় জীবন একবার আটকে গেলে মাকড়সার মতো মাকড়সার জালেই জীবন শেষ!
বিশ্বাবিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ফলাফল প্রকাশিত হলো অর্পিতা ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় ভর্তি সুযোগ পেলো ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট।অমিত কোথাও ভালো কোন সাবজেক্ট পেলো না।সে চট্টগ্রাম বিশ্বাবিদ্যালয়ের চারুকলায় ভর্তি সুযোগ পেলো।মাঝে মাঝে অর্পিতা ফোনে কথা বললো।সময়ের সাথে সাথে তাদের যোগাযোগ কমে গেল।বর্তমানে তাদের মধ্যে একেবারে যোগাযোগ বন্ধ।কারণ মোবাইল সুইজ অফ।একবার অমিত ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয় গিয়েছিলো অর্পিতার সাথে দেখা করতে।সেখানে গিয়ে জানতে পারে তার সহপাঠীদের থেকে অর্পিতা তার ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাই বিসিএস এডমিন ক্যাডার কে পরিবারের মতে বিয়ে করেছে।।তাই সে এখন কারো সাথে তেমন যোগযোগ রাখে না।
অমিত খুব দুঃখ পেলো। অশ্রু ঝরা চোখে ঢাকা সাইদাবাদ থেকে একটি টিকিট কেটে চট্টগ্রাম উদ্দেশ্য রওনা দিলো।অমিতের একটায় কষ্ট বিয়ে করেছে ভালো কথা। একটি বারের জন্য আমাকে জানালে এমন কি ক্ষতি হতো!অমিত কিছুতে নিজের মন কে বুঝাতে পারছে না।তা হলে কি আমি এতোদিন একজন ভুল মানুষের সাথে চলেছি!
কিছুদিন পর অমিত জানতে পারে অর্পিতার প্রশাসন ক্যাডারে জব হয়েছে।সেদিন অন্তত অর্পিতা কল করবে আশায় ছিলো কিন্তু করেনি!তারপর অমিত কোনোদিন তাকে অভিশাপ দেয়নি।তারজন্য মঙ্গল প্রার্থনা করে সব সময়,ভালোবাসার মানুষটা ভালো থাকার মধ্যে যেন এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি আছে।
কিছুদিন আগে একুশের বই মেলায় অমিতের “হ্নদয়ে খোঁজে ফিরে তব মায়া” এ বইটি পাঠক সমাজে খুব আলোরন সৃষ্টি করেছে।জনপ্রিয়তার তুঙ্গে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তার ছবিসহ স্বাক্ষাৎকার বের হয়েছে।
যা গভীর মনোযোগ দিয়ে অর্পিতা পড়ছে।
সাথে সাথে কল দিয়ে অমিতকে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করে।অমিত তার কন্ঠস্বর শুনে কোনো কথার উত্তর দেয় নি!প্রকৃত ভালোবাসা বোধয় এমনি হয় যাকে পাওয়ার জন্য জীবনে এতো আয়োজন সে যখন ফিরে আসে।মানুষ তখন পালিয়ে বেড়ায়।এ পালিয়ে বেড়ানো স্বভাব মানব জীবনে এক ধরনের গোলক ধাঁধাঁ।এই ধাঁধাঁ সবাই ভাঙতে পারে না কেউ কেউ পারে।আর যারা পারে তারা মাঝে মাঝে ঐ দূর আকাশের নক্ষত্র হয়ে যায়।