1. [email protected] : maruf :
  2. [email protected] : shishir :
  3. [email protected] : talha : Md Abu Talha Rasel
২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ| ১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ| শরৎকাল| সোমবার| দুপুর ১২:৩৬|

গল্পের নাম :আরশি নগর।

লিটন দত্ত।
  • Update Time : শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২৯৮ Time View

আগামীকাল মিলির বিবাহ বিচ্ছেদ হবে। গত তারিখে জর্জ সাহেব বসেন নাই।তাই কোর্টে থেকে নতুন ডেট দিয়েছে।মিলির কি যে আনন্দ কখন সকাল হবে!

সময় যেন কিছুতে শেষ হয় না।আগে থেকে ঠিক করে রেখে ছিলো হলুদ শাড়ি পরে খোঁফায় লাল ফুল গেঁথে আগামীকাল কোর্টে যাবেন।মিলি শিমুলকে ভালোবেসে এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে ছিলো দুজনে।মিলি সপ্তম শ্রেণী থেকে প্রেমের পনয়ে আবদ্ধ হয়েছিলো।শিমুল একটি কলেজে শিক্ষকতা করে যৎ সামান্য বেতন পান।কলেজে বাংলা সাহিত্যে পড়ান তাই টিউশনি থেকে বাড়তি আয়ের কোনো সুযোগ নেই।কারণ সাধারণত আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা অংক ইংরেজি আর বিজ্ঞানের সাবজেক্ট ছাড়া প্রাইভেট পড়েন না।আয় কম থাকলো মিলি আর শিমুলের সংসারে সুখ শান্তি ভালোবাসার কোনো কিছুর কমতি ছিলনা কখনো।

মিলিদের গ্রামের নাম উজান তলী।বাংলাদেশ আর দশটি গ্রামের মতো স্বাধীনতার পর থেকে তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নি।মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসার পর থেকে একে একে রাস্তা ঘাট ব্রীজ কালভাট বিদ্যুৎ সবেই আসতে শুরু হলো।একে একে উজান তলী গ্রামের দৃশ্যপট পাল্টে গেল।গতমাসে উজান তলী গ্রামে ইন্টারনেট সংযোগ আসলো। গ্রামের দিন মজুর থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর পেশাজীবী মানুষের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন।গ্রামের একমাত্র পরিবার যাদের কোন মোবাইল নাই আর তা হলো মিলিদের পরিবার।এই নিয়ে মিলির মনে কোনো দুঃখ নেই।তবে বিষয়টি নিয়ে শিমুল মাঝে মাঝে কষ্ট পাই।মিলিকে ভালোবেসে বিয়ে করে আজ অবধি ভালোবাসা ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি।মনে হয় তার সাথে বড্ড অপরাধ করছে শিমুল।একটি ফুট ফুটে টগবগ গোল গাল সুন্দর চেহারা, এতো সুন্দর একটা মেয়ে আমার মতো একজন কলেজ মাস্টারের জন্য সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে সেদিন যে চলে আসলো। আজ অবধি আর কোন দিন একবারের জন্যে মা বাবার কাছে যাওয়ার কথা আমাকে বলে নি আমি কষ্ট পাবো বলে।তবে মাঝে মাঝে আমার অগোচরে লুকিয়ে লুকিয়ে মিলি কাঁদে যা আমাকে প্রচন্ড কষ্ট দেই।কিন্তু আমি কি হয়েছে জানতে চাইলে বলে প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে।আসল কারন তা আমাকে কোনো ভাবে বুঝতে দিতে চাইতো না মিলি।

মিলির দূর-সম্পর্কে এক ফুফাতো ভাই সৌদিতে থাকে।গতকিছু দিন আগে দেশে এসে মিলির বাসায় বেড়াতে আসে।দু-দিন ছিলো পরে আবার চলে গিয়েছিলো।।মিলির মোবাইল নাম্বার নেই জেনে সে খুব অবাক হলো। সে দুলাভাই আর বোনের জন্য সৌদি থেকে দুটো খুব দামী মডেলের আইফোন পাঠালেন।যা পেয়ে মিলি আর শিমুলের পরিবার রীতিমত একেবারে আনন্দের বর্ন্যা বসে গেলো।শিমুল কলেজে গেলে মিলির এখন আর একাকিত্ব লাগে না।তার যত বন্ধু-বান্ধবী আছে কাছে আত্নীয় দূরের-আত্নীয় সকলের সাথে সারাদিন অডিও ভিডিও কলে ব্যস্ত সময় পার করছে মিলি।

তবে শিমুলেন কথা বলার একমাত্র মিলি ছাড়া আর কেউ নেই।খুব ছোটকালে শিমুলের মা বাবা দুজনেই সড়ক দুঘটনায় মৃত্যুে বরণ করে।তাই মামার বাসায় পড়াশুনা করে মানুষ হয়েছে।বর্তমানে মামা মামীও দুজনেই মারা গেছে।মামাতো ভাইরা দেশের বাহিরে থাকে।তাই তেমন একটা যোগাযোগ করার মতো কেউ নেই শিমুলের ।মাঝে মাঝে মামা তো ভাইদের সাথে কথা হয়,এছাড়া আর তেমন কারো সাথে কথা হয় না।

ইদানীং শিমুল লক্ষ করলো। মিলি তার কাছ থেকে কিছু একটা বিষয় লুকাছে মাঝে মাঝে মনে সন্দেহ আসে।আবার নিজেকে নিজে শান্তনা দেয় যে পৃথিবীতে একমাত্র পবিত্র সম্পর্ক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক।এতে কোন ভাবে একে অপরকে সন্দহ করা মোটেও ঠিক না।এটা হয়তো আমার মনের ভুল। নতুন মোবাইল পেয়েছে তাই হয়তো সকলের সাথে একটু যোগাযোগ করছে।কিছু দিন যেতে না যেতে বিষয়টি আর একটু পরিস্কার।ইদানীং মিলি খুব গভীর রাত পর্যন্ত ফোনে কার সাথে কথা বলে ।সকাল হলে ঘুম থেকে বেলা করে ওঠে।বিষয়টি নিয়ে শিমুল একদিন একটু রেগে কথা বলেছিলো।এতে মিলি দুই-তিন যাবৎ খাবার দাবার সব বন্ধ করে দিয়েছে।যা দেখে শিমুল নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না।এই আমি কোন মিলিকে দেখছি। যে মিলি আমি কষ্ট পাবো বলে মা বাবা কথা মনে পড়লে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হচ্ছে বলতো।

সেই মিলি আজ আমার উপর অভিমান করে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিলো।আর মিলি ইদানীং প্রায় একটি কথা বলে শিমুল আমার এই সংসার ঘর বাড়ি স্বামী বাঁধাধরা নিয়ম এগুলো আর আমার ভালো লাগছে না।তুমি একবার আমাকে এগুলো থেকে মুক্তি দাও!তোমার কাছে কখনো কিছু চাইনি, এবার একটু বিদায় চেয়েছি দিবা না?এবার আমাকে একটু মুক্ত করে দাও।তুমি যদি তা না করো তা হলে আমাকে চিরতরে হারাইবা আর কোনো দিন দেখবে না। হয়তো আমার মরা মুখও দেখতে হতে পারে!

এই ভাবে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালো।কারণ শিমুল ভয় পায় ভালোবাসার মানুষকে চিরতরে হারানোর চেয়ে সাময়িক সময়ের জন্য দূ-রে থাকা অনেক ভালো।সেদিন রবিবার খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মিলি শিমুলের জন্য সকালের নাস্তা তৈরি করলো।দুজন একসাথে নাস্তা সেরে একটি সিএনজি ভাড়া নিয়ে কোর্টে গেল। এক সাথে একেই সিএনজি তে দেখে এ্যাডভোকেট ভেবে ছিলো তাদের ডির্ভোস বোধয় আর হচ্ছে না।কিন্তু না বিষয়টি যথা নিয়মে দু-জনে খুব সুন্দর হাসি খুশি ভাবে সাইন করে দিল ডির্ভোস পেপারে।মিলির সেই কি আনন্দ আজ থেকে তারা দুজন দুজনা মুক্ত।আদালত চত্তরে দুজনে এক সাথে চা খেয়ে একে অপরকে গাড়িতে তুলে দিয়ে কি সুন্দর এক অপূর্ব বিদায়!

মিলি কুষ্টিয়া লালন সাঁইজির মাজারের উদ্দেশ্যে শ্যামলী গাড়ীর টিকিট কেটে রওনা হলো।মিলিদের পরিবার পারিবারিক ভাবে সাঁইজির ভক্ত।গাড়ী কিছু দূর যাওয়ার পর মিলি তার হাতের মোবাইল ফোনটি একে একে প্রত্যেকটি পার্স ভেঙ্গে চুড়ে চুড়মার করে বুড়িগঙ্গা নদীতে পেলে দিলো।মিলি আঁরশি নগরের খুঁজে শিমুলের কাছ থেকে চিরতরে বিদায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত সে আর সাঁইজির মাজারে যাইনি ।হ্নদয়ের কোন ক্ষত দহনের জ্বালায় সেই আর বাড়িতেও ফিরেনি।হয়তো সেই এখন কোনো এক মুক্তির মন্দিরে ক্ষত বিক্ষত হয়ে আরঁশি নগরের খোঁজে……..!

শিমুল নতুন করে আর কোনো সংসার করিনি।
এখন শিমুল স্বপ্ন দেখে মিলি ঠিক একদিন ফিরে আসবে।একটি কাগজের স্বাক্ষরে মানুষের হ্নদয়ে গভীরে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা কখনো শেষ হয়ে যেতে পারে না!যদি কখনো মনে হয় ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে তারপর দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।কারণ পৃথিবীতে কেউ কখন কাউকে একে বারে পাই না।ক্ষণিকের জন্য পাই।আর একবার পেয়ে হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে থাকার নামই জীবন।জীবন বড় রহস্যময় ,এই রহস্য ভেদ করা সাধারণ মানুষের পক্ষ অসম্ভব। মানুষ শুধু মাত্র বির্বতনের কাঠগড়ায় কালের স্বাক্ষী বেঁচে থাকে!

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2021