Connect with us

top2

সকল বিনিয়োগ সংস্থার একীভূতকরণ, পৃথক গভর্নিং বডির পরিবর্তে থাকছে একক বোর্ড

Published

on

ডেস্ক নিউজ 

বিনিয়োগে জটিলতা দূরীকরণে সকল বিনিয়োগ সংস্থাকে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর অংশ হিসেবে বিনিয়োগ সংস্থাগুলোর পৃথক গভর্নিং বোর্ড বিলুপ্ত করে একটি বোর্ড গঠন করা হচ্ছে। এজন্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনে কাজ করছে সংস্থাগুলো। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর অধ্যাদেশ জারির পর সবগুলো বিনিয়োগ সংস্থার বিদ্যমান গভর্নিং বডি বিলুপ্ত করে নতুন একটি বডি গঠন করা হবে। 

জানা যায়, বিনিয়োগ সংস্থাগুলোর গভর্নিং বোর্ডের প্রধান হিসেবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টা। বোর্ডের অপর সদস্যরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর বা সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন। গভর্নিং বডিগুলো ভিন্ন ভিন্ন হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই সদস্য দ্বারা গঠিত। তবে বিনিয়োগ সংস্থার ধরন অনুযায়ী কয়েকজন সদস্যের ক্ষেত্রে অমিল রয়েছে। কিন্তু প্রায় একই প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত হলেও পৃথক সংস্থার কারণে আলাদা আলাদা বোর্ড মিটিং করতে হয়। কিন্তু ধরাবাঁধা নিয়ম না থাকার কারণে দীর্ঘ বিরতিতে বোর্ড মিটিং হয়ে থাকে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ৬ আগস্ট বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) বোর্ড মিটিং হয়েছিল। এরপর মিটিং হয় চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল। প্রায় পাঁচ বছরের মাথায় এ মিটিং হয়। আর এ মিটিংয়ে একীভূতকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিনিয়োগ সংস্থাগুলো একীভূত হলে গভর্নিং বোর্ডের মিটিংয়ে বড় ধরনের বিরতি ঘটবে না এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে গতি আসবে বলে মনে করছেন বিডার কর্মকর্তারা।

বিডা সূত্রে জানা গেছে, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান গঠিতব্য নতুন বোর্ডের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে নতুন বোর্ড গঠন করা হলেও একীভূত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিনিয়োগ সংস্থাগুলো বর্তমান কাঠামো বজায় রেখে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

বিডার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিনিয়োগ সংস্থাগুলোর একীভূতকরণের প্রক্রিয়া পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যায় না। উদ্যোগটি শুরু হয়েছে, এখন এটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য একাধিক সংস্থা বিদ্যমান থাকায় বিনিয়োগকারীকে নানা ধরনের জটিলতা ও হয়রানির শিকার হতে হয়। কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়াই একজন বিনিয়োগকারী একটি সংস্থা থেকেই যেন সব ধরনের তথ্য ও সহযোগিতা পেতে পারেন, সে লক্ষ্য সামনে রেখেই একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ১৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে বিডার গভর্নিং বডির বৈঠকে একীভূতকরণের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। মূলত প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত আগ্রহেই এটি বোর্ডে উপস্থাপিত হয় বলে জানায় বিডা সূত্র।

মোট ছয়টি বিনিয়োগ সংস্থাকে একীভূতকরণের মাধ্যমে একটি সংস্থা গঠনের প্রস্তাব বিডার গভর্নিং বডিতে অনুমোদিত হয়। বিনিয়োগ সংস্থাগুলো হলো: বিডা, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ), পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ (পিপিপিএ) এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।

বোর্ডে অনুমোদনের পর একীভূতকরণে ৩০ এপ্রিল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমানকে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথা জানায় সরকার। পরে অ্যাটর্নি জেনারেলকেও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিটির সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং অর্থ বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান। তৎকালীন জনপ্রশাসন সচিব মোখলেসুর রহমানও সদস্য হিসেবে রয়েছেন কমিটিতে। বর্তমানে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে কর্মরত। কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিটির প্রথম বৈঠকে বিসিককে অন্যান্য বিনিয়োগ সংস্থার সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে আপত্তির দাবি তোলেন শিল্প উপদেষ্টা ও কমিটির আহ্বায়ক আদিলুর রহমান। তবে বিসিকের আওতাধীন যেসব প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (সিইপিটি) রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে সাভারে অবস্থিত চামড়া শিল্পনগরীকে বিনিয়োগ সংস্থাগুলোর সঙ্গে একীভূতকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে একীভূতকরণের আওতার বাইরে থাকছে বিসিক।

অবশ্য ইতোমধ্যে ইপিজেডে বিনিয়োগ রয়েছে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একীভূতকরণের বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়। তারা বলছে, ইপিজেডে সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করেই তারা বিনিয়োগ করেছে। এখন একীভূতকরণের ফলে তাদের বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা বাড়বে এবং ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে। তবে বিডার কর্মকর্তারা বলছেন, বিনিয়োগ সুবিধার জন্যই একীভূতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগে জটিলতা কমবে এবং আগের তুলনায় অনিশ্চয়তা কমবে।

এদিকে, বিনিয়োগ সংস্থাগুলো একীভূত হলেও বিদ্যমান জনবল কাঠামোয় চাকরির কিংবা আর্থিক কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা যেন তৈরি না হয়, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে একীভূতকরণে গঠিত কমিটি।

জানা যায়, একীভূতকরণের মাধ্যমে একটি সংস্থা গঠিত হলেও এর নাম কী হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এদিকে একীভূত প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আইনগত যেসব জটিলতা রয়েছে, সেগুলো নিরসন এবং একীভূতকরণের মাধ্যমে গঠিত সংস্থাটির অর্গানোগ্রাম প্রস্তুতসহ নানা বিষয়ে পরামর্শের জন্য একটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করেছে একীভূতকরণে গঠিত কমিটি। বেজার ‘প্রাইড’ প্রকল্পের আওতায় এ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © 2025. powered by All Time News.