top1

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশজুড়ে ক্যাম্পাস নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ, সোচ্চার ছাত্র নেতারা

Published

on

ঢাকা, ২৬ অক্টোবর — রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত অনুপ্রবেশ, পথহকারের অনিয়ম ও মাদক প্রবেশ—এই তিনটি সমস্যা শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রভাবিত করছে বলে ছাত্র, শিক্ষক ও প্রশাসনিক সূত্রে পাওয়া অভিযোগ ও পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ডিইউ)–কে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া উদ্বেগটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়েছে; সমস্যা মোকাবিলায় প্রশাসন, পুলিশ ও ছাত্রসংগঠনগুলো যৌথ প্রকল্প শুরু করলেও স্থায়ী সমাধান পেতে নীতি-সামঞ্জস্য ও সামাজিক উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গেটের আশেপাশে নিয়মিতভাবে পথহকার দেখা যায়। পাশাপাশি কিছুকাল ধরে বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে অনিয়ন্ত্রিত উপস্থিতি ও মাদক সাপ্লাই সম্পর্কিত অভিযোগ বাড়েছে—যা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা-অনুভূতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও অনুরূপ প্রবণতা নানা মাত্রায় দেখা যায়; তবে সার্বিক বিষয়গুলো স্বভাবগতভাবে ভিন্ন—কোনো ক্যাম্পাসে হকার বেড়ে যায়, কোনোখানে বহিরাগত অনুপ্রবেশের সমস্যা বেশি সক্রিয় বা অন্যত্র মাদকচক্রের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে উদ্বেগজনক।

কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গেট-নিয়ন্ত্রণ জোরদার, পরিচয় যাচাই বাড়ানো, সিসিটিভি ও রাউন্ড দীক্ষার ব্যবস্থা চালু করেছে। আবার ক’টি ক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠন ও প্রশাসনের যৌথ টহলও দেখা গেছে। মাদকাসক্তদের জন্য কাউন্সেলিং সেবা চালু ও সচেতনতামূলক কর্মশালাও শুরু হয়েছে। তবে সীমাবদ্ধতা আছে বাজেটের ঘাটতি, ক্যাম্পাস সীমানার খোলা প্রকৃতি এবং আশপাশের বস্তি বা বাণিজ্যিক এলাকায় কর্মসংস্থানের অভাব সমস্যার উৎস হিসেবে কাজ করছে। উপরন্তু শুধুমাত্র আইনগত দমনমূলক পদক্ষেপ ছাড়া স্থায়ী সঙ্গম পাওয়া কঠিন বলেও অভিজ্ঞান রয়েছ।

নবনির্বাচিত ডাকসু প্রতিনিধিরা বলেন, “আমরা একটি নিরাপদ শিক্ষানুকূল পরিবেশ চাই। প্রশাসনের সঙ্গে থাকার শর্তে ভারসাম্যপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে—শাস্তিমূলক তৎপরতার পাশাপাশি পুনর্বাসন ও সচেতনতা জরুরি।” কিছু শিক্ষক মনে করেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করলে মাদক-সংকট ও হকার-নির্ভরতা কমবে। প্রশাসন সূত্র জানায়, কৌশলগত এলাকায় আলো-ব্যবস্থা ও সিসিটিভি বাড়ানোসহ পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে কাজ চলছে; তবে কার্যকর ফল পেতে সমন্বিত সামাজিক নীতির প্রয়োজন।

শিক্ষা ও সুরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল বারবার টহল চালিয়ে বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তাদের পরামর্শ — ক্যাম্পাস-রূপরেখা শক্ত করা, বৈধ ভেন্ডর-জোন নির্ধারণ করে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা নেয়া, আশপাশের সম্প্রদায়ের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মাদকাসক্তদের জন্য পুনর্বাসন-সহায়তা সম্প্রসারণ। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কমিউনিটির মধ্যে নিয়মিত ফোরাম চালু করে তথ্য-ভিত্তিক নীতি গ্রহণ জরুরি।

রিপোর্টার পর্যবেক্ষণ থেকে কিছু সুপারিশকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে—ক্যাম্পাস সীমানা দৃঢ় করা, নিয়ন্ত্রিত গেটপয়েন্টে পরিচয় যাচাই জোরদার, নির্দিষ্ট ভেন্ডর অতি-সংরক্ষিত এলাকা তৈরি, মাদকসেবীর জন্য কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসন বৃদ্ধি, স্থানীয় কমিউনিটিকে অন্তর্ভুক্ত করে বিকল্প আয়-উপায় গড়ে তোলা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা-জনিত অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হটলাইন চালু রাখা।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বহিরাগত অনুপ্রবেশ, পথহকার ও মাদক—এই সমস্যা ভিন্ন মাত্রায় বিদ্যমান। এগুলো শিক্ষা পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে—বিশেষত নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সাধারণ সামাজিক পরিবেশে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করছে। কার্যকর, সার্বিক ও মানবিক নীতিমালার মাধ্যমে প্রশাসন, ছাত্রসমাজ ও স্থানীয় সমাজের যৌথ অংশগ্রহণ ছাড়া নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা কঠিন হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো বলছে, তারা ধাপে ধাপে উদ্যোগ নেবে এবং ফলাফল আনার জন্য সম্প্রদায় ভিত্তিক সমাধান চেষ্টা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version