আইন-আদালত

বাংলাদেশে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্রিটিশ এমপি টিউলিপের কী হবে

Published

on

রাজধানীর পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। এই মামলায় তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

টিউলিপ যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেটের এমপি এবং সাবেক সিটি মিনিস্টার। এই রায়ের ফলে টিউলিপ এমপির পদ ছাড়ার চাপে পড়তে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে বাংলাদেশে তদন্ত শুরুর পর সমালোচনার মুখে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মিনিস্টারের (ইকোনমিক সেক্রেটারি) পদ থেকে গত ১৪ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। তবে এমপি পদে বহাল আছেন তিনি।

এই রায় টিউলিপকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে?

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আদালত টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তাকে ঢাকায় এসে বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নিতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বাধ্য করেনি।

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। বাংলাদেশকে দেশটি টু–বি ক্যাটাগরির দেশ হিসেবে ধরে। এর মানে কাউকে প্রত্যর্পণ করতে হলে আইনজীবী ও বিচারকদের কাছে শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।

তবে টিউলিপকে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানাতে পারবে বাংলাদেশ।

দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে বলেছে, যদি বাংলাদেশ যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে এবং ব্রিটিশ কোর্ট ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে টিউলিপকে গ্রেপ্তার ও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

গতকাল রোববার ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে টিউলিপ ব্রিটিশ এমপির পদ ছাড়ার চাপে পড়বেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসার পর তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন, তবে এমপির পদে বহাল রয়েছেন।

টিউলিপ নিজের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার ভাষ্য, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত।

টিউলিপের মামলার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কয়েকজন ব্রিটিশ আইনজীবী। তারা এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশনারের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে টিউলিপের বিরুদ্ধে করা মামলাকে ‘কল্পিত ও অন্যায়’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তাছাড়া টিউলিপের অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য পরিচালনা করা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডকে অনুসরণ করে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

চেরি ব্লেয়ার বলেছেন, বাংলাদেশের উচিত টিউলিপের আইনজীবীদের কাছে সব অভিযোগ উপস্থাপন করা, যাতে তিনি এগুলোর বিষয়ে ন্যায্যভাবে প্রতিকার বা ব্যাখ্যা দিতে পারেন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মন্ত্রী পর্যায়ের মানদণ্ড বিষয়ক উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাস তার তদন্তে টিউলিপের বিরুদ্ধে কোনো ‘অসদাচরণের প্রমাণ’ পাননি।

তবে হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ‘সম্ভাব্য সুনামহানির ঝুঁকি’ সম্পর্কে টিউলিপের আরও সতর্ক থাকলে ভালো হতো বলে মন্তব্য করেন লরি ম্যাগনাস।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে টিউলিপ সিদ্দিকের নামও আসে।

গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির এমপির ক্ষমতা ব্যবহার করে মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিবের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেন। তিনজনই পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন।

শেখ হাসিনার পাঁচ বছর এবং রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের দুই বছরের জেল দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম মামলাটির রায় ঘোষণা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version