আইন-আদালত

বিনা অনুমতিতে কারো ডিভাইস চেক করা দণ্ডণীয় অপরাধ

ছবি: সংগৃহীত

রবিউল আলম

কাউকে না জানিয়ে বা তার অনুমতি ব্যতীত মোবাইল ফোন চেক করা, বিশেষ করে ব্যক্তিগত বার্তা, ছবি, কল রেকর্ড ইত্যাদি দেখা ব্যক্তির গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে যা আইনত দণ্ডনীয় হতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ ঘিরে পুলিশ মোবাইল ফোন চেক করে থাকেন। কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ডিভাইস চেক করার অনুমতি দেয়া হয়নি পুলিশকে। যদি তারা করে থাকেন তাহলে আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ এবং গণহয়রানি বলে সাব্যস্ত করা যাবে।

১৯৪৮ সালে ঘোষিত জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণার ১২ নম্বর আর্টিকেলে বলা হয়েছে, ‘কারো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কিংবা তার গৃহ, পরিবার ও চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়াল-খুশিমতো হস্তক্ষেপ কিংবা তার সুনাম ও সম্মানের ওপর আঘাত করা চলবে না। এ ধরনের হস্তক্ষেপ বা আঘাতের বিরুদ্ধে আ‌ইনের আশ্রয় লাভের অধিকার প্রত্যেকের‌ই রয়েছে।’

জাতিসংঘের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণার ১৭ নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তির নিজস্ব গোপনীয়, পরিবার, বাড়ি ও অনুরূপ বিষয়কে অযৌক্তিক বা বেআইনি হস্তক্ষেপের লক্ষ্যবস্তু বানানো যাবে না, তেমনি তার সুনাম ও সম্মানের ওপর বেআইনি আঘাত করা যাবে না।’

বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদেও বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনসাধারণের নৈতিকতা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনতা রক্ষার অধিকার থাকিবে।’

আইনি শাস্তি বা ব্যবস্থা:

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫: যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বে-আইনিভাবে প্রবেশ করেন বা প্রবেশ করতে সহায়তা করেন এবং তার উদ্দেশ্য যদি হয় অপরাধ সংঘটন করা তাহলে তিনি অনধিক ২ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ২০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

পেনাল কোড, ১৮৬০ (দণ্ডবিধি): ধারা- ৪০৫ ও ৪০৬ অনুসারে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ বা অপরের মালিকানাধীন জিনিস ব্যবহার করার দায়ে শাস্তি হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ব্যক্তি ৩ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থ দণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে। এছাড়া ধারা- ৫০০ অনুযায়ী, যদি কারো ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে মানহানি করা হয়, তাহলে মানহানির মামলা হতে পারে। এক্ষেত্রে শাস্তির মেয়াদ হতে পারে ২ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থ দণ্ড অথবা উভয় দণ্ড।

ধর্মীয় দৃষ্টিতে গোপনীয়তা:

ইসলাম ধর্মে গোপনীয়তা রক্ষা করা একটা আমানত। এমনকি স্ত্রী তার স্বামীর ডিভাইস পর্যন্ত চেক করতে পারবে অনুমতি ছাড়া। গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা বেশি অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। কারণ কিছু কিছু অনুমান তো পাপ এবং তোমরা কারো গোপনীয় দোষ অনুসন্ধান কোরো না।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১২)

কখন পুলিশ তল্লাশি করতে পারবে:

পুলিশ কারো মোবাইল ফোন চেক করতে চাইলে তাদের বলতে হবে যে, কেন আপনি আমার মোবাইল চেক করতে চান। এর যথাযথ কারণ দেখাতে হবে। মোবাইল ফোন তো ব্যক্তিগত জিনিস। আমি যদি মোবাইল ফোন দিয়ে কোনো অপরাধ সংঘটন করে থাকি, তাদের কাছে যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকে যে মোবাইল ফোন অপরাধ সংঘটনের টুল হিসেবে ব্যবহার হয়েছে, তাহলেও আমাকে বলতে হবে যে এই কারণে তারা আমার মোবাইল চেক করতে চায়। কেবল মনে হলো আর আমাকে দাঁড় করিয়ে আমার মোবাইল চেক করতে শুরু করল, কোনো সভ্য রাষ্ট্রে এই আচরণ হতে পারে না।

তবে কিছু ক্ষেত্রে চেক করতে পারেন-

যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে।

যদি আদালতের নির্দেশ থাকে।

যদি কোনো গুরুতর অপরাধ বা নাশকতা বা ষড়যন্ত্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদন থাকে।

তবে, কোনো অভিযোগ বা আদালতের নির্দেশ ছাড়া পুলিশ সাধারণত মোবাইল ফোন তল্লাশি করতে পারে না।

প্রতিকারে করণীয়:

কোনো ব্যক্তির ফোন বিনা অনুমতিতে চেক করা তার গোপনীয়তা ভঙ্গ করে এবং তা আইনত দণ্ডনীয়। ভুক্তভোগী ব্যক্তি চাইলে থানায় জিডি করতে পারেন অথবা সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ জানাতে পারেন অথবা আইনজীবীর পরামর্শক্রমে অভিযুক্ত ব্যক্তির নামে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version