ক্যাম্পাস

বুটেক্সে দীপাবলি ও শ্রী শ্রী শ্যামা পূজা উদযাপিত

Published

on

অভিষেক দত্ত, বুটেক্স প্রতিনিধি

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) সনাতনী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে শ্রী শ্রী শ্যামা পূজা-১৪৩২। সোমবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ে সারি সারি প্রদীপ প্রজ্বলন এবং ভক্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় দেবী শ্যামার পূজা। হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব এটি।

অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে অনুষ্ঠিত হয়। দিনভর উপবাস শেষে সনাতনী শিক্ষার্থীরা রাত্রিকালীন পূজায় অংশ নিয়ে গভীর আধ্যাত্মিকতার মধ্য দিয়ে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করে।

শুরুতে সনাতনী শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যায় দীপাবলি উদযাপন করে। রাত ১২টায় ঢাকের বাদ্য ও ‘জয় মা কালী’ ধ্বনিতে শুরু হয় মাতৃবরণ, অধিবাস ও মায়ের আরতি। তারপর রাত সাড়ে ১২টায় ভক্তি ও নিয়মানুসারে আরম্ভ হয় মাতৃপূজা। সে সময় সকলে মিলে ভক্তিমূলক গানের আসর বসে, যেখানে সম্মিলিত কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয় আনন্দ ও আধ্যাত্মিকতার এক অনন্য মেলবন্ধন। অতঃপর রাত সাড়ে ৪টায় অঞ্জলি প্রদান ও সবশেষে সকলের মাঝে প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে শ্যামা পূজা সম্পন্ন হয়।

এছাড়া পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতার আগে বুটেক্সের প্রতিটি আবাসিক হলে তৈরি হয় ভ্রাতৃত্ব ও আন্তরিকতার এক অনন্য পরিবেশ। হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা একসাথে প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকময় করে তোলে চারপাশ এবং বাজি ফুটিয়ে আনন্দে মাতেন সবাই। বহুদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী শেষপর্যন্ত একে অপরের মুখে মিষ্টি তুলে দিয়ে ভাগাভাগি করে নেন উৎসবের আনন্দ।

টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুদিপ্ত বণিক জানান,

মা আমাদের শুভ শক্তির প্রতীক। তিনি অশুভ শক্তির বিনাশ করে আমাদের জীবনে শান্তি নিয়ে আসুন—এই প্রত্যাশাই রাখি। বুটেক্স প্রাঙ্গণে দ্বিতীয়বারের মতো শ্রী শ্রী শ্যামা পূজা করতে পেরে আমরা সবাই ধন্য।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুশান্ত চৌধুরী বলেন,

আমরা বুটেক্স পরিবারের সবাই আবার একত্রে মিলিত হয়েছি দ্বিতীয়বারের মতো শ্রী শ্রী শ্যামা মায়ের আরাধনা করার উদ্দেশ্যে। মা আমাদের শক্তি, সাহস ও ইতিবাচকতা দিয়ে জীবনকে সুন্দর করুন। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে সবাইকে একত্রে রাখুন—এই মায়ের কাছে প্রত্যাশা।

তিনি আরও বলেন, ৪৬তম ব্যাচের দাদারা এই উৎসব প্রথম শুরু করেন। তাদের অনুপ্রেরণা আছে আমাদের প্রতিটি জুনিয়রের মনে। এই অনুপ্রেরণা আমি আমার জুনিয়রদের দিতে চাই, যাতে তারা ঐক্যের আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এক থাকে।

উল্লেখ্য, বাংলা কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তিভরে উদযাপন করেন শ্যামাপূজা। এই দিনে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও প্রিয়জনদের স্মরণ করা হয়, যা দীপাবলি নামে পরিচিত। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালনের বার্তা নিয়ে মহাশক্তি ত্রিনয়নী মা শ্যামা ধরাপৃষ্ঠে আবির্ভূত হন। তাই এই দিনটি বাঙালির কাছে শুধু পূজা নয়, বরং আলোর বিজয়ের উৎসব—যে আলো ভক্তের জীবনে আনে অবারিত শান্তি, শক্তি ও কল্যাণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version