top2

স্বপ্নের মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ

Published

on

বাংলাদেশের উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের অন্যতম স্থলবন্দর বুড়িমারী স্থলবন্দর। দেশের অর্থনীতির এই অন্যতম বাণিজ্যিক বন্দরে যাওয়ার একমাত্র মহাসড়ক লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক।

যে সড়কের মহাসড়কে উন্নিত করতে একসময় আন্দোলনে নেমেছিলেন স্থানীয়রা, সেই মহাসড়ক থেকেই এখন ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন মহাসড়কে চলাচলকারী মানুষজন। প্রতিবছরেই এখানে মর্মান্তিক দূর্ঘটনা এখন এই মহাসড়কের স্বাভাবিক চিত্র।

সম্প্রতি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় অটোরিকশা উল্টে খাদে পড়ে গিয়ে দুইজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে উপজেলার মহিষখোচা বাজার আদিতমারী বাইপাস সড়কের আনছার খাঁর পুকুরপাড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দক্ষিন বালাপাড়া ব্রমত্তর গ্রামের মৃত তালেব্বর রহমানের ছেলে বকুল মিয়া(৬০) ও একই ইউনিয়নের কচুড়ুমা বারহাত কালী এলাকার মেছের আলীর জামাতা আতিকুল ইসলাম আতিক(৩৫)।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গর্ত, খানাখন্দ আর ধূলায় আচ্ছন্ন লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক এখন যেন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কোথাও ছোট, কোথাও বড় গর্ত; কোথাওবা খানাখন্দ ভরাটের নামে ইট বিছিয়ে সাময়িক জোড়াতালি। নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের কারণে সড়কের মাঝখানে তৈরি হয়েছে উঁচু ঢিবি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে কাজ ফেলে রাখায় গাড়ি চলাচলের সময় ধূলা উড়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। অথচ এই সড়ক দিয়েই প্রতিবেশি ভারত ও ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলে।

জেলার পাঁচ উপজেলার প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম এই লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কটি যুক্ত বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক, বাস ও ছোট-বড় যানবাহন এই পথে চলাচল করে। কিন্তু দিন দিন এটি হয়ে উঠছে চলাচলের অযোগ্য। কোথাও বড় গর্ত, কোথাও বিটুমিন উঠে গেছে, আবার কোথাও ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।

মহাসড়কের ভোটমারী এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার অংশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে কাজ ফেলে রেখেছে। যানবাহন চললেই ধূলা-বালিতে ঢেকে যায় পুরো এলাকা, যেন ঘন কুয়াশা নেমে এসেছে। এতে চালক, যাত্রী ও আশপাশের বাসিন্দারা নিত্যদিন চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।

নর্থল্যান্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়ক এখন যেন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়েছে। আমরা কেউ অটোতে, কেউ সাইকেলে করে স্কুলে আসি কিন্তু প্রতিদিনই শুনি আমাদের মতো অনেক শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে একটি নিরাপদ সড়ক।

নর্থল্যান্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম বলেন, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। ধূলায় চোখ খুলে রাখা যায় না, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। দুর্ঘটনার ভয় তো রয়েছেই। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য দ্রুত এই রাস্তাটি সংস্কার করা জরুরি।

পথচারী সুজন মিয়া বলেন, এই রাস্তায় হাঁটাও কষ্টকর। ধূলায় মুখে-চোখে কিছুই দেখা যায় না, গাড়ি গেলেই ধূলার ঝড় উঠে। আমাদের প্রতিদিনই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বুড়িমারী থেকে ছেড়ে আশা গাড়িচালক ইকরামুল বলেন, রাস্তায় এত গর্ত যে গাড়ি চালানো মানেই ঝুঁকি নেওয়া। ধূলায় সামনে কিছু দেখা যায় না, আমাদের গাড়ি প্রায়ই নষ্ট হয়, তাই দ্রুত এই মহাসড়ক রাস্তা ফোর লেনে বাস্তবায়ন করা হোক। সরকারের শুভদৃষ্টি কামনা করছি।

লালমনিরহাট ও জনপথ বিভাগ,উপ-বিভাইগীয় প্রকৌশলী,মোজাম্মেল হক বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ চিঠি চালাচালির পর তারা অবশেষে কাজ শুরু করতে রাজি হয়েছে।“আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি। পাশাপাশি ভাঙাচোরা অংশগুলোও সংস্কার করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version