ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে পরিণত ধ্বংসযজ্ঞের পর গাজার নারীরা বাড়তি বোঝা নিয়ে দিনযাপন করছেন; বহু নারী বর্তমানে পরিবারের একমাত্র সহায়-রেখা হয়ে উঠেছেন, স্বাস্থ্যসেবা ও মৌলিক সেবা সংকটের মুখে ঘর সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন এবং মানসিক ও শারীরিক আঘাতের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবিলা করছেন—স্থানীয় সংগঠন, মানবিক সংস্থা ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর রিপোর্টে এমনই চিত্র উঠে এসেছে।
উদ্ধার ও বাসস্থানের অভাব: বহু পরিবারের প্রধান বয়স্ক পুরুষ নিহত বা আটক হওয়ায় নারী-অধিনায়ক বাড়ি বাড়তি দায়িত্ব নিয়েছেন; ধ্বংসস্তূপে থাকা বা ক্ষতি সাপেক্ষ বাড়িগুলো পুনর্নির্মাণ ও মেরামত করার মতো আর্থিক ও প্রযুক্তিগত যোগসাজশ নেই। অস্থায়ী শেল্টারগুলোতে জায়গা ও গোপনীয়তার অভাব নারীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে ঝুঁকিতে ফেলে।
স্বাস্থ্য ও মাতৃত্বসেবা সংকট: হাসপাতাল ও নার্সিং সেবা চাপের মধ্যে; প্রসূতি এবং গাইনেকোলজিকাল সেবা, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও শিশুশিশুদের টীকার সরবরাহ এখন অপর্যাপ্ত। ওষুধ, স্যানিটারি কিট ও পুনর্বাসনসংক্রান্ত উপকরণ কমে যাওয়ায় গর্ভবতী ও নবজাতকসহ নারী ও শিশুদের জীবনঝুঁকি বেড়েছে—স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন দ্রুত ও ধারাবাহিক সাহায্য ছাড়া পরিস্থিতি আরও অবনত হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য ও নির্যাতনের ঝুঁকি: আগ্নেয়াস্ত্র-ঘোঁষণ, নিহত-আহত পরিবার ও বাড়িতে অস্থিরতার ফলশ্রুতিতে নারীদের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা ও ট্রমার মাত্রা বাড়ছে; নারী-সম্মত সাইকোসোশ্যাল সেবা ও নিরাপদ সাপোর্ট সেন্টারের চাহিদা উল্লেখযােগ্যভাবে বেড়েছে। সংক্ষিপ্তস্থানে ও সংঘর্ষপূর্ণ পরিবেশে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ে—এমন আশঙ্কাও মাদক করে মানবাধিকার সংগঠনেরা।
জীবিকায় প্রভাব: ব্যবসা-চালানো, ছোট বেচাকেনা বা কৃষি-ভিত্তিক আয় বন্ধ হওয়ায় নারীরা পরিবারের খাদ্য-ব্যবস্থাপনা ও মাসিক আয়ের উৎস খোঁজার জন্য অতিরিক্ত কাজ করছেন; তবে শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ায় আয়ের বিকল্প সীমিত। শিশুরা স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় নারীরা হোম-স্কুলিং বা ছোট কাজ জুড়ে সময় ব্যয় করছেন, যা তাদের আর্থিক অবস্থা আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া: জাতিসংঘ, এনজিও ও নারীঅধিকার সংগঠনগুলো জরুরি ত্রাণ, মাতৃত্বসেবা সরবরাহ, সাইকোসোশ্যাল সহায়তা ও নারী-নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে; তারা নিরাপদ রিলিফ করিডর, মেডিক্যাল কনস্যাইডেশন ও পুনর্বাসন কর্মসূচি দ্রুত চালু করার দাবি তুলেছে। কিছু স্থানীয় নারী-নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠী কমিউনিটি কিচেন, শিশুসুরক্ষা গোষ্ঠী ও পিয়ার সাপোর্ট গ্রুপ চালু করে সামান্য ত্রাণ পৌঁছে দিতে কাজ করছে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যত করণীয়: বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু তাত্ক্ষণিক ত্রাণ নয়—দীর্ঘমেয়াদি পুনর্গঠন, নারীদের আর্থিক সার্বভৌম্য, নিরাপদ বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার পুনরুদ্ধারই স্থায়ী সমাধান। স্থানীয় নারীদের অংশগ্রহণ ছাড়া পুনর্নির্মাণ নীতিতে গঠনমূলক প্রভাব আনা কঠিন হবে বলে তারা সতর্ক করেছেন। আন্তর্জাতিক সহায়তা, নিরাপদ ত্রাণ রুট নিশ্চিতকরণ এবং লিঙ্গসংবেদনশীল পুনর্বাসন কর্মসূচি এখনই জরুরি।
উপসংহার: গাজার নারীরা শুধু সংঘাতের শিকার নন—তারা পরিবার ও সমাজ পুনর্গঠনে মূল ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছেন; কিন্তু তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভীতিকর স্বাস্থ্যগত, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাগত বাধা—যেগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য সুনির্দিষ্ট, সময়োপযোগী ও লিঙ্গ-কেন্দ্রিক সহায়তা অপরিহার্য।