top1

ট্রাইব্যুনালের চার্জশিটে নাম আসা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জন হেফাজতে: সেনাসদর

Published

on

অলটাইম নিউজ ডেস্ক

গুম সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো হাতে পায়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার তথ্য জানিয়েছে তারা।

শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম করে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলায় ৩০ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বুধবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদেরকে আগামী ২২ তারিখের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে। এই পরোয়ানায় সাবেক ও কর্মরত কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তার নাম আছে। এই সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনাও চলছে। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সেনাবাহিনী। 

সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক (মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সেলিম জাহিদ, পরিচালক (মিলিটারি অপারেশন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনজুর হোসেন, পরিচালক (জাজ এডভোকেট জেনারেল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসিফ ও পরিচালক (পার্সনেল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান। 

মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, দুটি মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন এবং বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন।

আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সেনা কর্মকর্তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, সংবিধান স্বীকৃত বাংলাদেশের সব আইনের প্রতি সেনাবাহিনী শ্রদ্ধাশীল। গত ৮ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টিভি স্ক্রল বা গণমাধ্যম থেকে জানার পরপর সেদিনই এলপিআরের একজনসহ ১৬ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। একজন বাদে ১৬ জনের মধ্যে ১৫ জনই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সেনা সদরে জয়েন করেছে। শুধু একজন যোগাযোগ করেননি বিধায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। শুধুমাত্র মেজর জেনারেল কবির হেফাজতে আসেননি। নয় তারিখে তিনি (মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ) বাসা থেকে বের হন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। সে হিসেবে তিনি একটা ইলিগ্যালি অ্যাবসেন্টে আছেন। ইলিগ্যালি অ্যাবসেন্স ঘোষণা করে প্রসিডিউর নেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি যেন দেশের বাইরে যেতে না পারে সেজন্য সকল পোর্টে বলা হয়েছে।

তবে এই কর্মকর্তারা এখন আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না বলেও উলে¬খ করেন  মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান।

তারা সেনা হেফাজতে আছেন, নাকি সেনা সদরে সংযুক্ত হয়েছেন––এমন প্রশ্নে পরে তিনি উলে¬খ করেন, তারা হেফাজতে আছেন। তবে যেহেতু বেতন ও রেশন সংক্রান্ত নানা হিসাব রাখতে হবে তাই সংযুক্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি জানান, গুম কমিশন কাজ করছে। আর্মি আরেকটা কমিশন করলে সেটাকে আন্ডারমাইন করা হবে। এই কমিশনকে যতটুকু সাহায্য করার সেটা করছি। সেনাপ্রধান আবারও জানিয়েছেন আমরা জাস্টিসের পক্ষে, নো কম্প্রোমাইজ উইথ ইনসাফ।

গুমের বা নির্যাতনের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি তাদের সহানুভূতি আছে বলেও জানান বলেন মো. হাকিমুজ্জামান।

তিনি জানান, সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো তাদের হাতে পৌঁছেনি এবং পুলিশের পক্ষ থেকেও তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।

কিছু কর্মকর্তার এমন অপরাধের দায় সেনাবাহিনী নেবে কি না এমন প্রশ্নে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান ‘দায় নেওয়া উচিত কি না’ বলে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। ট্রাইব্যুনাল বা ফৌজদারি আইনে সেনা কর্মকর্তা বা সেনা সদস্যদের বিচার হতে কোনো বাধা নেই।

সাবেক কর্মকর্তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা চাইলে সেনাবাহিনীর হেফাজতে আসতে পারেন, অথবা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন।

ডিজিএফআই নিয়ে করা এক প্রশ্নে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, এই সংস্থাটি সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাই অভিযুক্তরা সেনা কর্মকর্তা হলেও সেখানে তাদের কথা বলার এখতিয়ার নেই।

আগামী ২২ অক্টোবর তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা যাবে কি না এমন প্রশ্নে জানান, আইনি উপায়েই সমাধান করা হবে।

তিনি সেনাবাহিনীর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচারের পক্ষে। আমরা ন্যায়বিচারের  থাকব। ন্যায়বিচারের সাথে কোনও আপস করা হবে না।’

হাকিমুজ্জামান বলেন, গুম কমিশন এবং আইসিটির প্রধান প্রসিকিউটর উভয়ই প্রকাশ্যে বলেছেন যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযুক্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। 

কমিশনের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে এবং প্রসিকিউটরের মন্তব্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল যে একটি সংস্থা হিসেবে সেনাবাহিনী জড়িত ছিল না। এগুলি তখন র‌্যাব বা ডিজিএফআইতে কর্মরত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত পদক্ষেপ ছিল।

অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, ‘সেনাবাহিনী গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে টানা ১৪ মাস ধরে যা দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম মোতায়েন। আমরা জাতীয় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে ধারাবাহিকভাবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছি। ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে, আমাদের মোতায়েন আরও বেশি হবে বর্তমান শক্তির চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি।’

এদিকে, ট্রাইব্যুনালে দুই মামলায় চার্জশিটভূক্ত এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরতরা হলেন- মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কর্নেল কে এম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান জুয়েল এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version