অভিষেক দত্ত, বুটেক্স প্রতিনিধি
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) সাহিত্য সংসদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ‘অরণ্যের সুর ~ ফোক ফেস্ট ২.০’, যেখানে লোকজ সংস্কৃতি, সুর ও আবহে মুখরিত হয়ে উঠেছিল পুরো ক্যাম্পাস। ব্যস্ত নগর জীবনে হারিয়ে যাওয়া লোকজ সুর ও প্রাচীন সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতেই আয়োজন করা হয় এ উৎসবের।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে বসে নানা পণ্য ও হস্তশিল্পের স্টল, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজের হাতে তৈরি নানা জিনিস বিক্রি করেন এবং বিভাগীয় কুইজ প্রতিযোগিতা হয়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক পর্ব, যেখানে বাউল গান, পালাগানসহ বিভিন্ন লোকজ পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
সাহিত্য সংসদের এই উৎসবের সূচনা হয় গত ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার রুমে পাঠচক্র ও সাহিত্য কথনের মাধ্যমে। ১৩ অক্টোবর সোমবার বুটেক্সের কদমতলায় অনুষ্ঠিত হয় পথ নাটক। ১৪ অক্টোবর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, থিয়েটার কর্মশালা ‘হাতে খড়ি’ এবং ১৫ অক্টোবর শর্টফিল্ম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
বুটেক্স সাহিত্য সংসদের সভাপতি সৌরভ চৌহান বলেন, “অরণ্যের সুর শুধু একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়, এটি আমাদের শেকড়ের সঙ্গে পুনঃসংযোগের এক আন্তরিক প্রয়াস। আজকের প্রজন্ম প্রযুক্তির জগতে যতই এগিয়ে যাচ্ছে, ততই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের লোকজ সুর, প্রাচীন গল্প আর গ্রামীণ ঐতিহ্যের রেশ। আমরা চেয়েছি, ‘অরণ্যের সুর’-এর মাধ্যমে সেই বিস্মৃত সুরকে আবার ফিরিয়ে আনতে, তরুণদের মনে ছুঁয়ে দিতে লোকসংস্কৃতির সৌন্দর্য। এই আয়োজনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি পর্বের মাধ্যমে আমরা চেয়েছি মানুষ যেন অনুভব করে—লোকজ সংস্কৃতি কোনো অতীতের নিদর্শন নয়, বরং তা আমাদের জীবনের অংশ, আমাদের পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য ধারা। আধুনিকতার ভিড়ে থেকেও আমরা যেন ভুলে না যাই আমাদের নিজস্ব সুর, আমাদের মাটির গন্ধ। এই চেতনা বাঁচিয়ে রাখাই ‘অরণ্যের সুর’-এর মূল উদ্দেশ্য।”
বুটেক্স সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক অর্পণ সাহা বলেন, “বুটেক্সে এতগুলো সুন্দর সুন্দর অনুষ্ঠান দেখেছি, সবসময় একটা ইচ্ছা কাজ করত—যদি কোনোদিন এমন একটা বড় আয়োজন নামানোর সুযোগ পাই, তাহলে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে সেটা সফল করার চেষ্টা করব। এইবার সেই সুযোগটা পেয়েছি, তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের মতো করে যতটুকু পারি মন দিয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। তবে একটা কথা না বললেই নয়, জুনিয়র ব্যাচ গুলো যদি আমাদের পাশে না থাকতো তাহলে হয়তো আমরা এই আয়োজন কখনোই করতে পারতাম না, তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ যাদের নিরলস পরিশ্রমে আমাদের এই আয়োজন করতে পেরেছি। কতটা ভালো করতে পেরেছি সেটা সত্যিই জনিনা , সেটা হয়তো দর্শক, অংশগ্রহণকারী আর সবার অনুভূতিই বলতে পারবে। তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে—গতকাল সবাই মিলে যেভাবে একসাথে অনুষ্ঠানটা উপভোগ করেছি, সেটার অনুভূতি সত্যিই ভাষায় বোঝানো কঠিন। সেই মুহূর্তটা আমার কাছে অনেক স্পেশাল ছিল। আশা করি আগামী দিনে বুটেক্স সাহিত্য সংসদ আরও বড় পরিসরে, আরও সৃজনশীল ও প্রাণবন্ত আয়োজনের মাধ্যমে সবাইকে চমকে দেবে এবং এই ধারাবাহিকতা আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
রাতে জনপ্রিয় ব্যান্ড জলের গানের সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে ‘অরণ্যের সুর ~ ফোক ফেস্ট ২.০’ এর সমাপনী ঘটে।