অলটাইম নিউজ ডেস্ক
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ঘোষণা হতে পারে। এটি নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে প্রথম কোনো হত্যা মামলার রায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
মামলার অন্যান্য অভিযুক্ত হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম। অপরদিকে রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম জানান, আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের জবানবন্দিতে ‘ট্রু অ্যান্ড ফুল ডিসক্লোজার’ পাওয়া গেছে বলে প্রসিকিউশন মনে করে।
শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজেদের জন্য কোনো আইনজীবী নিয়োগ না করায় ট্রাইব্যুনাল তাদের পক্ষে আমির হোসেনকে ডিফেন্স কাউন্সেল হিসেবে নিয়োগ দেয়। যুক্তিতর্কে তিনি বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি কেন্দ্রিক আন্দোলন বৈধ ছিল; কিন্তু সরকার পতনের একদফা আন্দোলন ছিল অবৈধ। তার দাবি, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তাই তাদের খালাস দেওয়া উচিত।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
পরে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন জানান সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন মঞ্জুর করে এবং তিনি সাক্ষ্য প্রদান করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
এই মামলার পাশাপাশি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, অন্যটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা।
উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার, অনুগত প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অংশগ্রহণে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অভিযোগের বিচার কার্যক্রম চলছে।