ঢালিউডের প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর প্রায় তিন দশক পর নতুন করে হত্যা মামলা পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এই নির্দেশ দেন। মামলাটি তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে রমনা থানায়। এমন অবস্থায় মামলার আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আসার পর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না হত্যার সঙ্গে জড়িত সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক ও খলনায়ক ডনের।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক জানান, আদালতের নির্দেশে সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে ১১ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং আসামিদের অবস্থান শনাক্তে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মোবাইল ট্র্যাকিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
ওসি আরও জানান, কেউ যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য আসামিদের নাম ও তথ্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে কোনো ধরনের চাপ নেই এবং খুব শিগগির আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে, মামলার অন্যতম আসামি সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হককে গত চার দিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। তার ব্যবহৃত ফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একইভাবে অভিযুক্ত ডন হকও কোনো ফোনকল বা বার্তায় সাড়া দিচ্ছেন না।
গত ২১ অক্টোবর মধ্যরাতে সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম বাদী হয়ে রমনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক ছাড়াও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, চলচ্চিত্রের খলনায়ক ডনসহ মোট ১১ জনের নাম রয়েছে।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে সালমান শাহকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাদের প্রতিবেদনে এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করে। তবে সালমানের মা নীলা চৌধুরী শুরু থেকেই এই মতের বিরোধিতা করে দাবি করে আসছেন, তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢালিউডে অভিষেক ঘটে সালমান শাহর। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি অল্প সময়েই দর্শকের হৃদয়ে স্থান করে নেন। মৃত্যুর ২৯ বছর পরও তিনি ঢালিউডের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে স্মরণীয়। মামলার পুনরুজ্জীবনের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর তার ভক্তদের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, মৃত্যুর আগের দিন সালমান শাহ ‘প্রেম পিয়াসী’ ছবির ডাবিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি তার বাবাকে ফোন করে স্ত্রী সামিরাকে এফডিসিতে নিয়ে আসতে বলেন। সেখানে সামিরা গিয়ে দেখেন, সালমান ও নায়িকা শাবনূর ডাবিং রুমে খুনসুটি করছেন। এতে রেগে যান সামিরা এবং ফ্লোর থেকে বেরিয়ে যান। সালমান ও পরিচালক বাদল খন্দকার তার সঙ্গে গাড়িতে ওঠেন, কিন্তু সামিরা কোনো কথা বলেননি। গাড়ি এফডিসির গেট পর্যন্ত গেলে সালমান ও বাদল নামেন এবং কিছুক্ষণ আড্ডা দেন। পরে বাদল খন্দকার রাত ১১টায় সালমানকে নিউ ইস্কাটন রোডের ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ আলম জানান, মৃত্যুর কিছুদিন আগে সালমান শাহ মানসিক চাপে ভুগছিলেন। পারিবারিক টানাপোড়েন এবং প্রযোজকদের সঙ্গে মতবিরোধ তার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল। তিনি কিছু সময়ের জন্য চলচ্চিত্র সমিতির নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়েছিলেন।
দীর্ঘ ২৯ বছর পর সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাটি নতুন করে হত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত শুরু হওয়ায় ঢালিউডে পুরনো রহস্য আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।