গত কয়েক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে স্বর্ণের দাম উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। বিশ্বের শীর্ষ স্বর্ণবাজারগুলোতে প্রতি আউন্স স্বর্ণের মূল্য প্রায় ২% হ্রাস পেয়েছে, যা বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। এতে করে দেশের সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা উত্তেজিত ও সন্তুষ্ট।
দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণ:
প্রথমেই জানা যাক কেন স্বর্ণের দাম সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছিল। ২০২৫ সালের গোড়ার দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে বেশ কিছু অস্থিরতা দেখা দেয়। প্রধান কারণগুলো ছিল:
- আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা: মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় অঞ্চলে সংঘর্ষ এবং অস্থির পরিস্থিতি মানুষের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণের প্রতি চাহিদা বাড়ায়।
- মুদ্রাস্ফীতি: আমেরিকা ও ইউরোপে উচ্চমাত্রার মুদ্রাস্ফীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর শিথিল নীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা রোজগারের ঝুঁকি কমাতে সোনা কিনতে শুরু করে।
- ডলারের দুর্বল অবস্থান: ডলার দুর্বল হওয়ার ফলে স্বর্ণের দাম বেড়ে যায় কারণ স্বর্ণকে ডলারে কেনা হয় এবং ডলার কমজোর হলে স্বর্ণের দাম বাড়ে।
এই কারণগুলো মিলিয়ে স্বর্ণের দাম ২০২৫ সালের প্রথমার্ধ থেকে মধ্যপর্যন্ত উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে এবং দাম বাড়তে থাকে।
দাম কমার পেছনের কারণ:
বর্তমানে দাম কমার কারণগুলোর মধ্যে প্রধান হলো:
- যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় অর্থনীতির সুদের হার বৃদ্ধি: মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সহ অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি উচ্চ সুদের হার ঘোষণা করে যা ডলারের মূল্য আরও বাড়ায়।
- বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষণ: মাঝে মাঝে রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা কমে আসায় লগ্নিকারীরা ঝুঁকি নিতে শুরু করেছেন এবং ঝুঁকি সহনশীল অন্যান্য বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।
- ডলারের শক্তিশালী অবস্থান: ডলার শক্তিশালী হওয়ায় স্বর্ণের চাহিদা কমে যায়।
ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া:
ব্যবসায়ীরা দামের হ্রাসকে সুবিধা হিসাবে দেখছেন। ঢাকা স্বর্ণ বাণিজ্য সমিতির সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ জানান, “দামের এই পতনে নতুন ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে। ক্রেতারা স্বর্ণ গঠন ও বিনিয়োগে উৎসাহী।”
অন্যদিকে, সাধারণ মানুষ বলছেন, “এখন স্বর্ণ অনেকের নাগালে চলে এসেছে। আমরা গয়না কিনতে পারছি, যা আগের তুলনায় অনেক সহজ।”
অর্থনীতিবিদদের কথা:
বিশ্লেষকরা আরও বলেন, “স্বর্ণের দাম ওঠা-নামা বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির সাথে জড়িত। বিনিয়োগে বিচক্ষণতার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকা জরুরি।”