ডেস্ক নিউজ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাবা ও সাবেক কৃষি, সমাজকল্যাণ ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মির্জা রুহুল আমিন রাজাকার ছিলেন না বলে দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল। তার দাবি মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা স্বপরিবারে ভারতে ছিলেন।
গতকাল রবিবার (৯ নভেম্বর) মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ আলোচনার সূত্রপাত। ওই বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গণহত্যায় পাকিস্তানি বাহিনীকে যারা সহায়তা করেছিল, আমরা তাদেরকে আগামী নির্বাচনে বর্জন করব।’ এর প্রতিক্রিয়ায় মির্জা রুহুল আমিন ওরফে ‘চখা মিয়া’র রাজাকার হওয়ার প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেন বেশকিছু নেটিজেন।
জবাবে দেওয়া পোস্টের শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিখেছেন, আমি গত দুদিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে আছি। কিছু কথা বলা খুব জরুরি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ, তরুণ প্রজন্মের জন্য। এসব কথা বলার কখনো প্রয়োজন মনে করিনি। জীবনের এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে যখন দেখি সমাজে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে মিথ্যার চাষ করছে, তখন বলা আরও জরুরি।
তিনি আরও লিখেন, আমার আব্বা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন ১৯৭১ সালের মার্চের ২৭ তারিখে আমার নানাবাড়ি যান আমার দুই বোন এবং মাকে নিয়ে। তারপর এপ্রিলে চলে যান ভারতের ইসলামপুরে। রিফিউজি ক্যাম্পে ছিলেন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময়। ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও স্বাধীন হয়। আমার বাবা ঠাকুরগাঁও ফিরে আসেন তখনই। যখন ফিরে আসেন, দেখেন সব লুট হয়ে গেছে। আমার মরহুম মা তাঁর গয়না বিক্রি করেন। আমি যোগ দেই অর্থনীতি শিক্ষকতায়। প্রথম বেতন তুলে দেই আম্মার হাতে। আল্লাহর রহমতে জীবন চলে যায়। ১৯৭১ সালের পরে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এভাবেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তৈরি করেছে জীবন।
মির্জা রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে কখনও কোনো মামলা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘গত ৫৪ বছরে আমার বাবার নামে কোথাও কোনও মামলা হয়নি। ঠাকুরগাঁও জেলার যা কিছু আধুনিক, এর শুরু আমার বাবার হাতে। এই জেলার প্রতিটি সৎ মানুষ জানে আমার বাবার কথা। আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে তার স্মৃতি রক্ষার জন্য যে ফাউন্ডেশন হয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সকল নামকরা রাজনীতিবিদ। ১৯৯৭ সালে তার মৃত্যুতে সরকারি শোক প্রকাশ করা হয়।’
মিথ্যাচার শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আমার বাবা সম্বন্ধে মিথ্যাচার শুরু হয় গত আওয়ামী রেজিমে। দুঃখজনকভাবে গত এক বছর ধরে একটি গোষ্ঠী- যারা নিজেদের জুলাইয়ের আন্দোলনের অংশীদার মনে করে, তারাও এই মিথ্যাচারে অংশ নিচ্ছে। মিথ্যা, গুজব ও অপবাদ সমাজ ধ্বংস করে।
আমি আমার সারাজীবন এ দেশ আর জাতির জন্য দিয়েছি। গত বছর জুলাইয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশকে আশা দেখিয়েছে। আমি আশা করব নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে মিথ্যার চাষ আমাদের ছেলে-মেয়েরা করবে না। এরা সত্যের পথে থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মেধা, বুদ্ধিমত্তা, সততা আর পলিসি দিয়ে। শঠতা আর মিথ্যা দিয়ে পপুলিজম কেনা যায়, কিন্তু দেশ গড়া যায় না। আসুন আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা, দেশপ্রেম আর নতুন প্রজন্মের সাহস আর দেশপ্রেম দিয়ে তৈরি করি একটি মর্যাদাপূর্ণ সৎ মানবিক বাংলাদেশ।
পোস্টের শেষে পবিত্র কুরআন থেকে সুরা হুজুরাতের একটি আয়াতের অর্থ তুলে ধরেন তিনি। এতে লেখা- ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান তো পাপ।’
প্রসঙ্গত, মির্জা রুহুল আমিন ১৯৬২-৬৬ সালে পরপর দু’বার পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় দীর্ঘ ১৭ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি দিনাজপুর-৪ ও ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীসভার কৃষিমন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা ও দিনাজপুর-২ আসনের সাবেক সাংসদ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দাবি করেন মির্জা রুহুল আমিন একজন ‘যুদ্ধাপরাধী’ এবং যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় তার নাম ৭১০ নাম্বরে ছিলো। তবে ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাজাকারদের যে তালিকা প্রকাশ করে, তাতে মির্জা রুহুল আমিনের নাম নেই