ইবি প্রতিনিধি
উত্তরবঙ্গের মানুষকে বন্যার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে মশাল মিছিল করেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় থেকে একটি মশাল মিছিল বের হন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা।
এসময় শিক্ষার্থীদের ‘জাগো বাহে, কোনঠে সবাই; উত্তরবঙ্গের কান্না, আর না আর না; উত্তরবঙ্গ ভাসে, ইন্টেরিম হাসে; ভারত যদি বন্ধু হও, ন্যায্য পানির হিস্যা দাও; চুক্তি নিয়ে টালবাহানা, আর না আর না; তিস্তা পাড়ের সাথে, ইবিয়ানরা আছে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের উত্তরবঙ্গ এমন একটা ভৌগোলিক অবস্থানে অবস্থিত যেখানে শস্য উৎপাদনে সবার উপরে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে যত সরকার এসেছে প্রত্যেকটা সরকার আমাদের উত্তরবঙ্গকে সবসময় বৈষম্যের মধ্যে রেখেছে। এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে বিগত সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা ভেবেছিলাম ইন্টেরিম সরকার সবার প্রথমে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। কিন্তু দীর্ঘ দেড় বছর পার হয়ে গেলেও তারা কোনো প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমরা ইবিয়ানদের পক্ষ থেকে নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরুর দাবি জানাচ্ছি।’
এসময় ইবি ছাত্র ইউনিয়ন, ‘ইবি সংসদের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, দশকের পর দশক উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত। আমরা গতবছর বন্যায় দেখেছি বাড়িগুলো কিভাবে নদীর সাথে বিলীন হয়ে গেছে। মানবিক কোনো ব্যক্তি এই দৃশ্য দেখে স্থির থাকতে পারবে না। ইন্টেরিম সরকারের প্রতি আহ্বান— যেকোনো মূল্যে নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু করবেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সাবেক সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই ইবি থেকে বন্যা-কবলিত মানুষদের সহায়তা করতে উত্তরবঙ্গে যাই। কিন্তু এর স্থায়ী কোনো সমাধান আমরা পাই না। এর একমাত্র স্থায়ী সমাধান হচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন।’
বৈছাআ ইবি শাখা সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন একদিনের কোনো আন্দোলন নয়। এটি একক কোনো ব্যক্তির আন্দোলন নয়। একক কারোর আন্দোলন নয়। প্রায় ৪৫ বছর ধরে চলে আসা আন্দোলন। উত্তরবঙ্গের সন্তান আবু সাইদের বুকে গুলি চালানোর কারণে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছিল। কিন্তু বারবার সেই আবু সাইদের উত্তরবঙ্গই বৈষম্যের শিকার হয়। দেশে যে সরকার যখনই এসেছে তারা উত্তরবঙ্গের সাথে বৈষম্য করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের ছাত্রজনতার রক্তের উপর দিয়ে ফকির বিদ্রোহ, কৈবর্ত বিদ্রোহ, সাওতাল বিদ্রোহ থেকে শুরু করে জুলাই বিপ্লবে আবু সাইদের রক্তের উপর দিয়ে যে ড. ইউনুস সরকারে বসেছেন, তিনিও সবার আগে আবু সাইদের বাড়ি গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন উত্তরবঙ্গকে নিজের মতো করে দেখবেন। কিন্তু তিনি তার কথা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। যদি আগামী নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু না হয়; তাহলে আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারা দেশের ছাত্রজনতাকে সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।’