মধ্যরাতে ‘উপদেষ্টার ইশারায়’ ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছে দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেল। সকালে ছাড়া পেয়ে বাসায় ফিরে সাংবাদিক সোহেল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে এই অভিযোগ দেন।
তিনি লিখেন, গত রাত ১২টার দিকে ডিবি প্রধান আমার সঙ্গে কথা বলবেন, এই অজুহাতে ৫-৬ জন ডিবি সদস্য জোর করে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ডিবিতে নিয়ে আসামির খাতায় আমার নাম লেখা হয়। জুতা-বেল্ট খুলে রেখে গারদে আসামিদের সঙ্গে আমাকে রাখা হয়। কিন্তু কেন আমাকে আটক করা হলো? তা আমি যেমন জানতাম না, তেমনি যারা আমাকে তুলে এনেছিলেন বা ডিবির উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও কিছু বলতে পারেননি। দীর্ঘ সময় পর বুঝতে পারলাম, সরকারের একজন উপদেষ্টার ইশারায় মাত্র ৯ জন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ দেয়ার জন্যই আমাকে আটক করা হয়েছিল। আমার সাথে সংগঠনের সেক্রেটারি আবু সাঈদ পিয়াসকেও আটক করা হয়। তিনি এখনও ডিবি কার্যালয়ে আছেন।
গতরাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়েছিল সাংবাদিক সোহেলকে। প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবি হেফাজতে থাকার পর ছাড়া পেলেন অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি ও দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান মিজানুর রহমান সোহেল। রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছে ডিবি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম। বাসায় ফিরে সাংবাদিক সোহেলও তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি তার রাতের ডিবি কার্যালয়ে অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেন।
নিজের ওই স্ট্যাটাসে মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি শুকরিয়া আদায় করে দৈনিক ভোরের কাগজের অনলাইন প্রধান লিখেন, আলহামদুলিল্লাহ। বিনা অপরাধে প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবি হেফাজতে থাকার পর তারা আমাকে স্বসম্মানে মাত্র বাসায় পৌঁছে দিয়েছে।
সোহেল আরও লিখেন, আজ (বুধবার) ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) নিয়ে ডিআরইউতে মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি)-এর প্রেস কনফারেন্স করার কথা ছিল। আমি সেখানে ছিলাম মিডিয়া পরামর্শক। সেই প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করাই তাদের প্রধান টার্গেট ছিল। কিন্তু তাদের জন্য আফসোস, যে উদ্দেশ্যে তারা প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতে চাইলো, সেটা দেশের সবাই জেনে গেল।
তিনি লিখেন, দেশের মুক্ত বাণিজ্য নীতির সঙ্গে এনইআইআর স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক। প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে দেশে প্রতিযোগিতা কমিশনও রয়েছে। অথচ মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে সারাদেশে ২৫ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে পথে বসানোর গভীর চক্রান্ত চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামের সাধারণ মানুষ, প্রবাসীসহ অনেকেই বিপদে পড়বেন। একটা চেইন ভেঙে পড়বে। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে। জেনে রাখা ভালো, এই ৯ জনের একজন ওই উপদেষ্টার স্কুলবন্ধু।
সাংবাদিক সোহেল আরও লিখেন, একটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার কেন ভয় পায়? শুধুমাত্র প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতেই কি আমাকে গভীর রাতে জোর করে তুলে নিতে হলো? যারা মুখে ‘বাকস্বাধীনতা’র বুলি আওড়ান, তারাই কি আমাকে বাকরুদ্ধ করতে এই আয়োজন করলেন? মগের মুল্লুকে এই কি তবে বাকস্বাধীনতার বাস্তব চিত্র? আমাকে আটক করার ঘটনা জানাজানি হতেই বহু শুভাকাঙ্ক্ষী, ভাই, বন্ধু, সহকর্মী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অনেকেই খবর নিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়েছেন, বিবৃতি দিয়েছেন, সংবাদ প্রকাশ করেছেন। তাদের এই সমর্থন ও আওয়াজের কারণেই আমি দ্রুত মুক্তি পেয়েছি বলে বিশ্বাস করি। যারা আমার পাশে ছিলেন তাদের সবার প্রতি আমার অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।