Connect with us

top1

‘দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বশূন্যতার জন্য দায়ী আ. লীগ ও ভারত’: মঞ্জুর কাদের

Published

on

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকটের জন্য আওয়ামী লীগ এবং ভারতকে দায়ী করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মঞ্জুর কাদের। নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে প্রকাশিত এক দীর্ঘ লেখায় তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন ‘মুজিববাহিনী’ গঠন থেকে শুরু করে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার বিশ্লেষণ তুলে ধরে এই মন্তব্য করেন।

তার মতে, ‘আধিপত্যবাদী ভারত’ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদক্ষেপ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভক্তির বীজ বপন করেছিল, যা একটি টেকসই নেতৃত্ব গড়ে ওঠার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে।

‘মুজিববাহিনী’ ও ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ

সাবেক প্রতিমন্ত্রী তার লেখায় উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালের মে মাসে চার যুবনেতা—শেখ ফজলুল হক মনি, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ও সিরাজুল আলম খানকে নিয়ে যে ‘মুজিববাহিনী’ গঠন করা হয়েছিল, তা ছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

ছবিতে মেজর জেনারেল এসএস উবান (মাঝখানে) মুজিব বাহিনীর প্রধান প্রশিক্ষক। সিরাজুল আলম খান (বাম দিক থেকে প্রথম), শেখ ফজলুল হক মনি(বাম দিক থেকে দ্বিতীয়), আবদুর রাজ্জাক (ডান দিক থেকে প্রথম), এবং তোফায়েল আহমেদ (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: মনজুর কাদেরের ফেসবুক পোস্ট থেকে

তিনি লেখেন, এই বিশেষ বাহিনীটির প্রশিক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল সুজন সিং উবান। মঞ্জুর কাদেরের দাবি, ‘ভারত এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের আস্থায় নেয়নি’ এবং এই বাহিনীটি ছিল মিত্রবাহিনীর সেনাপতি জেনারেল অরোরার নিয়ন্ত্রণেরও বাইরে, যা শুরু থেকেই একটি সমান্তরাল শক্তি তৈরির ইঙ্গিত দেয়।

রক্ষীবাহিনী, ছাত্রলীগের বিভক্তি ও জাসদের জন্ম

মঞ্জুর কাদের তার পোস্টে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের অস্থিরতার জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপকে দায়ী করেন। তিনি লেখেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সমান্তরাল শক্তি হিসেবে ‘জাতীয় রক্ষীবাহিনী’ গঠন করা হয়েছিল, যা “বিদ্রোহ দমনের নামে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা করতে থাকে।”

তিনি আরও দাবি করেন, রক্ষীবাহিনীর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার ‘তর্জনীর ইশারায়’ এই বাহিনী নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত।

ছাত্রলীগের ভাঙন প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭২ সালের কাউন্সিল অধিবেশনের কথা তুলে ধরেন, যেখানে শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণির নেতৃত্বাধীন সম্মেলনে যোগ দিলে সিরাজুল আলম খানের অনুসারীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এই বিভক্তির পথ ধরেই পরবর্তীতে জাসদের জন্ম হয় এবং এর প্রতিক্রিয়ায় শেখ মনিকে চেয়ারম্যান করে আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তার মতে, এই বিভাজনকে কেন্দ্র করে ‘সমগ্র বাংলাদেশে চরম নৈরাজ্য এবং অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে।’

মহসিন হলের হত্যাকাণ্ড ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

তৎকালীন রাজনৈতিক সংঘাতের ভয়াবহতা তুলে ধরতে গিয়ে মঞ্জুর কাদের ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের ‘সেভেন মার্ডার’-এর ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। তিনি জানান, ওই রাতে তিনি হলের ৩৬৭ নম্বর কক্ষে ছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডের পর দরজা খুলতেই বারুদের তীব্র গন্ধ পান ও হত্যাকারীদের কাছ থেকে হুমকির শিকার হন।

তিনি লেখেন, “পরেরদিন জানলাম, তোফায়েল আহমেদ এবং আব্দুর রাজ্জাকের দ্বন্দ্বের কারণে এই ঘটনা ঘটে। উভয়েই ১৯৭১ এ গঠিত মুজিব বাহিনীর নেতা ছিলেন।”

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক পদক্ষেপের সমালোচনা করে লেখেন, যে নেতা একসময় ‘কমিউনিস্ট হতে পারব না’ বলে মন্তব্য করেছিলেন, তিনিই পরে একদলীয় ‘বাকশাল’ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। তার মতে, ‘এই অদ্ভুত বৈপরীত্যের’ কারণেই শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনের ভিত দুর্বল হয়ে পড়েছিল।

মঞ্জুর কাদের তার লেখায় প্রশ্ন তোলেন, এই নেতৃত্বশূন্যতা কি শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ব্যর্থ নেতৃত্বের কারণে’ নাকি ‘আধিপত্যবাদী ভারতের’ সুচিন্তিত পরিকল্পনার ফল। তিনি বর্তমান রাজনীতির সঙ্গে সে সময়ের ঘটনার সাদৃশ্য টেনে ২০২৪ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।

তবে লেখার শেষে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, “নতুন প্রজন্ম ভারতকে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন, আওয়ামী লীগকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের ঘোষণা দিয়েছেন।”

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © 2025. powered by All Time News.