Connect with us

top1

নারী শিক্ষার্থীদের আস্থার শীর্ষে শিবির: ছাত্র সংসদ নির্বাচনে নতুন সমীকরণ

Published

on

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে ছাত্র রাজনীতির চিত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের ভোটার হিসেবে অংশগ্রহণ এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি তাদের আস্থার বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেলে ৪ জন নারী শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন এবং সবাই নির্বাচিত হন:

  • ফাতিমা তাসনীম জুমা – মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক (১০,৬৩১ ভোট)
  • উম্মে সালমা – কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক (৯,৯২০ ভোট)
  • সাবিকুন নাহার তামান্না – সদস্য পদ (১০,০৮৪ ভোট)
  • আফাসানা আক্তার – সদস্য পদ (৫,৭৪৭ ভোট)

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেলে তিনজন নারী প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন, যার মধ্যে দুটি নির্ধারিত নারী পদে এবং একটি সহ–সমাজসেবা সম্পাদক পদে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচনে এজিএস (নারী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ৩,৪০২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এছাড়া নারী সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পদে নিগার সুলতানা ২,৯৬৬ ভোট, নারী সহ-ক্রীড়া সম্পাদক পদে ফারহানা আক্তার ১,৯৭৬ ভোট এবং নারী কার্যকরী সদস্য পদে নুসরাত জাহান ইমা, ফাবলিহা জাহান নাজিয়া ও নাবিলা বিনতে হারুন যথাক্রমে ৩,০১৪, ২,৪৭৫ ও ২,৭৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক নারী ভোট বিশ্লেষণ (টেবিল)

বিশ্ববিদ্যালয়নারী ভোটার সংখ্যানির্বাচিত নারী প্রার্থীসর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তমন্তব্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়১২,৪৫৩৪ জন১০,৬৩১ (তাসনীম জুমা)শিবিরের শক্ত অবস্থান
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়তথ্য অনুপস্থিত৩ জনতথ্য অনুপস্থিতঅন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়১১,৮৯৭৭ জন৩,৪০২ (মেঘলা)নারী নেতৃত্বে বৈচিত্র্য

নারী ভোটারদের অংশগ্রহণ

ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৩৯,৮৭৪ জন, যার মধ্যে ১২,৪৫৩ জন নারী ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোটগ্রহণের হার ছিল ৭৪.৭৮%। জাকসুতে মোট ভোটার ছিলেন ১১,৮৯৭ জন। এই বিপুল সংখ্যক নারী ভোটারের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি আস্থা রাখার প্রবণতা স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে।

ছাত্রী হল ও সংগঠনের প্রভাব

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছাত্রী সংগঠন “ইসলামী ছাত্রী সংস্থা” ছাত্রী হলগুলোতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সুফিয়া কামাল হল, কুয়েত-মৈত্রী হল এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং সংগঠনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন।

রাজনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও বৈচিত্র্য

রাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্যানেলে নারী, সংখ্যালঘু এবং আন্দোলনকেন্দ্রিক শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি “অন্তর্ভুক্তির রাজনীতি” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

ইশতেহার ও কার্যক্রম

ইসলামী ছাত্রী সংস্থা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • নিপীড়নবিরোধী মনিটরিং সেল
  • অনলাইন অভিযোগ প্ল্যাটফর্ম
  • আইনি সহায়তা
  • সাইবার বুলিং প্রতিরোধ
  • স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক সহায়তা
  • ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার
  • নেতৃত্ব বিকাশে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রশিবিরের সংগঠিত কাঠামো, শৃঙ্খলা, এবং নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট ইশতেহার তাদের ভোট ব্যাংককে শক্তিশালী করেছে। অন্যদিকে, ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভক্তি, নেতিবাচক প্রচারণা এবং সংগঠনের দুর্বলতা নারী ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

এই প্রবণতা ইঙ্গিত দেয় যে, নারী শিক্ষার্থীরা এখন আর শুধু ভোটার নন, বরং তারা রাজনীতির সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতি তাদের আস্থা ভবিষ্যতের ছাত্র রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

::Alltime Desk::

Copyright © 2025. powered by All Time News.