Connect with us

top2

মেসের মিলরেট নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র মারামারি, আহত ৪

Published

on

ইবি প্রতিনিধি

মেসের মিল ৪০ অথবা ৪৫ টি বাড়ানো-কমানো নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে মেস মালিকসহ দুপক্ষের ৪ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে কুষ্টিয়া সদরের পিটিআই রোডের একটি মেসে এ ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সজীব ইসলাম ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড জিওগ্রাফি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুজ্জামান নয়ন। অপর পক্ষের আহত শিক্ষার্থী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম রোহান। 

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মেসের মিলরেটের পরিমাণ ৪০ অথবা ৪৫ টি নির্ধারণ করা নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এসময় দু’পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে গালিগালাজ ও হামলার অভিযোগ তোলে। ঘটনায় সজীব ইসলাম গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। অপরদিকে রোহান দাবি করেন, সজীব ও নয়ন স্থানীয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে এসে তাকে মারধর করে এবং কুষ্টিয়া ছাড়ার হুমকি দেয়। উভয় পক্ষই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা ও ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছে।

সজীব ইসলাম বলেন, “শুক্রবার রাতে আমরা মেসে বসে মিলের বিষয়ে কথা বলছিলাম। এরপর রোহান ভাই হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। আমার দিকে এগিয়ে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। আমি প্রতিবাদ করলে তিনি আমার মুখে-মাথায় ঘুসি মারেন এবং হাত মুচড়ে ধরেন। এক পর্যায়ে আমাকে মাটিতে ফেলে মাথা ও শরীরে এলোপাতাড়ি ঘুসি মারেন এবং পা টাইলসে আঘাত করে জখম করেন। এতে আমার চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে এবং পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। আমি দাঁড়াতে পারছিলাম না।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “আমি তাকে বারবার অনুরোধ করেছি বিষয়টি মেসের সবার সঙ্গে আলোচনা করে মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু তিনি উলটো অকথ্য গালাগাল করেন, কুষ্টিয়ার স্থানীয় হওয়ায় ক্ষমতা ও ভয়ভীতি দেখান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমি এর বিচার এবং নিরাপত্তা চাই।”

অন্য ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী হাসিবুজ্জামান নয়ন বলেন, “মেসের মিল রেট ৪৫ অথবা ৪০ টাকা করার বিষয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রোহান ভাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। আমাকে অনবরত ঘুসি দিয়ে জোরজবরদস্তি করে রুম থেকে বের করে দেন তিনি। এ সময় তিনি বন্ধু সজীকে লক্ষ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তাকে ঘুসি, কিল মেরে জখম করেন। তারপর সে পড়ে গেলে মাটিতে ফেলে তার মাথা ও শরীরে এলোপাতাড়ি ঘুসি মারেন এবং পা টাইলসে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। এতে তার চোখ রক্তবর্ণ হয় এবং পায়ে ফোলা ও ক্ষতচিহ্ন তৈরি হয়। পরে আমরা সবাই মিলে সজীবকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করাই। সে কয়েকবার জ্ঞান হারায় ও বমি করে। প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে আরও বড়ো ঘটনা ঘটতে পারে।”

অপরপক্ষে মনিরুল ইসলাম রোহান বলেন, “রাত ৯টার দিকে সজীব, শিহাবসহ কয়েকজন আমাকে হিসাব-নিকাশের জন্য ডাকে। খাবারের বিল নিয়ে মতবিরোধ হয়, কারণ মাসের শুরুতে ৪০টি ফিক্সড মিলের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সজীবরা তা মানতে অস্বীকার করে। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, চিৎকার-গালাগালি হয় এবং শেষে ঠিক হয় সবাই মিলে আবার হিসাব করবে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি তৃতীয় তলায় গেলে সজীব ও তার রুমমেট নয়ন আমাকে মারতে আসে। আমি নানা-নানির উপস্থিতির কারণে বাইরে গিয়ে সমাধান করার কথা বললেও তারা শোনেনি। কিছুক্ষণ পর সজীব ও নয়ন কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি-সেক্রেটারিসহ ২৫-৩০ জন লোক নিয়ে এসে বাসার মালিক ও অন্যান্যের সামনে আমাকে মারধর করে, জামা-কাপড় টেনে ছিঁড়ে ফেলে এবং চোখে আঘাত করে। এরপর আমাকে রাতের মধ্যেই কুষ্টিয়া ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয়।”

নিরাপত্তা সংকট দাবি করে তিনি বলেন, “ভয়ে আমি নানা-নানির সঙ্গে রুম থেকে বের হতে পারিনি। সকালে ফিরে এসে হাসপাতালে এক্স-রে করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিষয়টি বিভাগের সভাপতিকে জানিয়েছি এবং বলেছি, বাসার মালিকের কাছে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

এ বিষয়ে মেস মালিক তুহিন বলেন, “সজীব আর রোহানের ধস্তাধস্তির সময় আমি ছিলাম না, পরে শব্দ শুনি এবং একজন এসে আমাকে এটা বললে আমি তাদেরকে নিচে আসতে বলি সমাধানের জন্য। কিন্তু এদিকে সজীব তার বন্ধুবান্ধবসহ অনেক মানুষ ডেকে নিয়ে আসে ফলে বাইরে ধস্তাধস্তি হয় দুই পক্ষের মাঝে। এতে আমিও হাতে ব্যথা পাই। ঝামেলা সামলাতে না পেরে পরে আমি রোহানকে তার রুমে পাঠিয়ে দেই এবং বাকিদেরকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। বিশ্ববিদ্যালয় হলো সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। সামান্য বিষয় নিয়ে এমন ঘটনা আসলে লজ্জাজনক।”

কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, “রাতে আহত অবস্থায় সজীব ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বিশেষ করে হাত, মুখমণ্ডল ও চোখে গুরুতর আঘাত লেগেছে। বর্তমানে দুইটি স্যালাইন চলমান রয়েছে। আমরা সিটি স্ক্যান ও এক্সরে করার পরামর্শ দিয়েছি। পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে এলে অবস্থার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। আপাতত তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।”

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি কেটে দেন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © 2025. powered by All Time News.