রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আয়োজনে একটি বিশেষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও ‘মিট দ্য ডিরেক্টর’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে বিভাগের ১২৩ নম্বর কক্ষে এই আয়োজন করা হয়।
প্রদর্শনীতে নিউইয়র্ক প্রবাসী শামীম আল আমিন নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘Hope Never Dies’ দেখানো হয়। শামীম আল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং তিনি বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। করোনাকালে নিউইয়র্কের মানুষের, বিশেষ করে সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেঁচে থাকার লড়াই, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই নিয়ে নিউইয়র্কপ্রবাসী এই বাংলাদেশি সাংবাদিক সম্প্রতি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন।
বিভাগের বর্তমান সভাপতির উদ্যোগে বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া পিআর এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিম-এর আয়োজনে ও ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট টিমের কারিগরি সহযোগিতায় এই প্রদর্শনী ও মিট দ্য ডিরেক্টর প্রোগ্রামটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. সাজ্জাদ বকুল, সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার। প্রদর্শনীতে বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হোসেন (সাজ্জাদ বকুল) অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করে বলেন, ‘এই প্রামাণ্যচিত্রটি করোনার কঠিন সময় নিয়ে তৈরি করা। কীভাবে এই মহামারি আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়েছিল, সেখানকার মানুষ কীভাবে তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সেই চিত্রই এখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চলচ্চিত্রটি শেষ মুহূর্তেও মানুষের জীবনে আশা মরে না সেই বিশ্বাসকেই তুলে ধরে।’
তিনি এই ধরনের কার্যক্রমকে বিভাগের নতুন কারিকুলামের অংশ হিসেবে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘নতুন কারিকুলামে আমরা দেশ-বিদেশের পরিচালক, গবেষক, লেখক—সবার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে চাই। আজকের এই আয়োজন তারই একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ।’
প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী শেষে পরিচালক শামীম আল আমিন নিউইয়র্ক থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রায়োগিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
চলচ্চিত্র তৈরির পেছনের অনুপ্রেরণা জানতে চাইলে শামীম আল আমিন বলেন, ‘হঠাৎ বিশ্বজুড়ে করোনা নামে এক মহামারীর আবির্ভাব ঘটলো। কিছু বুঝে উঠার আগে দেখলাম নিউইয়র্ক স্থবির হয়ে উঠল। এমন একটি শহর, সবাই বলে নিউইয়র্ক কখনো ঘুমায় না, সেই শহর স্থবির হয়ে গেল। বিজ্ঞান বারবার ব্যর্থ হচ্ছিল। ভেবে ছিলাম আমরা হয়তো বের হতে পারবো না। এই ঘটনাটাই আমাকে চলচ্চিত্রটি করতে অনুপ্রেরণা দিল। আমি সাধারণত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করি। এর বাইরেও নানা বিষয়ে ছবি করতে চাই।”
তিনি জানান, তিনি মূলত বাংলাদেশী কমিউনিটিকে কেন্দ্র করে প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন এবং এতে পেশাভিত্তিক বিভিন্ন মানুষ, যেমন- ট্যাক্সি ড্রাইভার, শিক্ষক ও অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের করোনাকালীন অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এই পর্বে বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম ধ্রুব প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির প্রশংসা করে জানান তিনি নামটি দেখেই আগ্রহী হয়েছিলেন এবং তিনি ফিল্ম মেকিংয়ের মৌলিক বিষয়গুলো জানতে চান। পরিচালক শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রামাণ্যচিত্র তৈরির পেছনের অভিজ্ঞতা, কৌশল সম্পর্কেও শিক্ষার্থীদের ধারণা দেন।
অনুষ্ঠানে বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারিহা তাহসিন রাইসা তার ভালো লাগার কথা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার এই ধরনের অভিজ্ঞতা ছিল না। অনেক ভালো লাগলো। অনেক কিছু শিখতে পারলাম।’
পরিশেষে পরিচালক শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন। বিভাগের সভাপতি সাজ্জাদ বকুল ও সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
পিআর এন্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিমের কোঅর্ডিনেটর ফারজানা তন্বী, সদস্য সিদ্দিকুর রহমান খান, ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট টিমের কামরুজ্জামান ফাহাদ, প্রান্ত কুমার দাশ, রাজু ইসলাম এই আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।