Connect with us

top1

অপহরণের শিকার ঢাবির আরেক ছাত্র, বললেন হাত-পা-চোখ বাঁধার দুঃসহ গল্প

Published

on

ঢাকা থেকে কুমিল্লা যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সিফাত আহাম্মেদ। রবিবার (২৬ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জের মোগরাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অপহরণের পর মুক্তি পেয়ে তিনি নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বর্ণনা দেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধিকে।

সিফাত আহাম্মেদ বলেন, ‘গতকাল পরীক্ষা শেষে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ভার্সিটির বাসে মোগরাপাড়া পর্যন্ত আসি। সেখান থেকে লোকাল বাসে উঠতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে একটিকে সিগন্যাল দিই, কিন্তু বাসটি থামেনি। ঠিক তখনই পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা দুইজন লোক হঠাৎ আমাকে ধরে ফেলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা আমাকে একটি প্রাইভেটকারে তোলে। ছুরি বের করে আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে।

আমি চিৎকার করলে তারা বলে, ‘চিৎকার করলেই মেরে ফেলব।’ এরপর চোখ, হাত ও পা বেঁধে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে সিটের সঙ্গে বেঁধে রাখে, যেন না নড়তে পারি, না কথা বলতে পারি।’

তিনি আরও জানান, অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে মানিব্যাগ ও দুটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে মানিব্যাগে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখে ২ লাখ টাকায় সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। তারা তার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড নেয় এবং ডাচ-বাংলা অ্যাকাউন্টে থাকা ৫০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে বলে।

সিফাত বলেন, ‘আমি বললাম, ডাচ-বাংলা এটিএম কার্ড থেকে বিকাশে টাকা পাঠানো যায় না। তখন তারা আমার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে টাকা আনতে বলে। একে একে কয়েকজন বন্ধুকে ফোন দিতে বাধ্য করে, কিন্তু কারও কাছেই টাকা ছিল না। কিছুক্ষণ পর তারা বলে, যাদের ফোন দিয়েছিলে আবার কল দে, ১০–১৫ হাজার টাকা জোগাড় করতে বল।’

তিনি আরও জানান, এক পর্যায়ে তার মামা ফোন করলে অপহরণকারীরা তাকে ১০ হাজার টাকা চাইতে বলে। কিন্তু মামার অসুস্থতা বুঝতে পেরে তারা আর তাকে চাপ দেয়নি।

পরে চান্দিনা এলাকায় পৌঁছে অপহরণকারীরা বলে, ‘তুই যদি ১০-১৫ হাজার টাকা দিতে পারিস, তোকে ছেড়ে দিব। আমরা তোর ক্ষতি করিনি, তুইও আমাদের ক্ষতি করবি না। কাউকে কিছু বলবি না।’ এরপর সিফাতকে চোখ, হাত ও কোমর বেঁধে গাড়ি থেকে নামিয়ে বলে, সামনে ৫ মিনিট হাঁটলে তাদের ‘লোক’ এসে তাকে নিয়ে যাবে।

অপহরণকারীদের গাড়ি চলে যাওয়ার পর তিনি হাত খোলার চেষ্টা করলেও শক্ত করে বাঁধা থাকায় পারেননি। কিছুক্ষণ পর রাস্তার পাশে এক তরুণকে দেখে সাহায্য চান। ‘ওই ছেলে দৌড়ে গিয়ে কাঁচি এনে আমার হাতের বাঁধন কাটেন। তখন জিজ্ঞেস করি, এটা কোথায়? তিনি বলেন, চান্দিনা’-বলেন সিফাত।

তার হাতে একটি ফোন অপহরণকারীরা যাওয়ার সময় দিয়ে যায়। যেটা প্রথমে বন্ধ ছিল। পরে চালু করলে দেখেন ফোনের সব ব্যাংকিং অ্যাপস, মেসেজ ও মেসেঞ্জার ডিলিট করা। তিনি নতুন করে অ্যাপ ইনস্টল করে দেখেন তার ৬০ থেকে ৬২ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

সিফাত বলেন, ‘আমার মামা গত মাসে বিদেশ থেকে নতুন ফোনটা এনে দিয়েছিল, দাম প্রায় ৪০ হাজার টাকা। মানিব্যাগে খুচরা ১৫০ টাকা রেখেছে, বাকি সব নিয়ে গেছে। সেই টাকা দিয়েই আমি বাড়ি ফিরেছি।’

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *