অলটাইম নিউজ ডেস্ক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দার্জিলিং জেলায় টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। পাশাপাশি, বহু পর্যটক স্থানীয়ভাবে আটকে পড়েছেন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায়।
পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যমতে, রোববার একদিনেই দার্জিলিংয়ে ২৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে—যা গত কয়েক বছরে দেখা না যাওয়া একটি রেকর্ড। স্থানীয়রা জানান, সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে এমন প্রবল বর্ষণ হয়েছিল।
দার্জিলিংয়ের মিরিক, সুখিয়াপোখরি, সৌরেনি, আপার দুধিয়া, জসবীরগাঁও ও নাগ্রাকোটা এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মিরিকে মারা গেছেন ১১ জন, বাকিরা সুখিয়াপোখরি ও আশপাশের এলাকা থেকে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে মিরিক ও সুখিয়াপোখরিতে ধ্বংসযজ্ঞ সবচেয়ে বেশি।
রোববার বিকেল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়, গভীর রাতে দারাগাঁও এলাকায় একটি বাড়ি ধসে পড়ে। আপার দুধিয়া ও ডাম্ফেডার এলাকায় একাধিক বাড়ি ধসে পড়ে এবং দুধিয়া নদীতে ভেসে যায়। এ অঞ্চলে থাকা কয়েকটি হোমস্টেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি বিএসএফের (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) একটি ক্যাম্পও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভূমিধসের কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে সেতু ধসে পড়েছে, অনেক সড়ক হয়েছে অচল। মিরিক ও দার্জিলিংয়ের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী দুধিয়া নদীর সেতু সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ায় মিরিক পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া সিকিমের কালিম্পং ও শিলিগুড়ির সঙ্গে দার্জিলিংয়ের যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময় হাজার হাজার পর্যটক দার্জিলিংয়ে ভিড় করেন। এবারের দুর্যোগে অনেকেই সেখানে আটকে পড়েছেন। প্রশাসন জানায়, কতজন আটকে আছেন সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনও জানা যায়নি, তবে সংখ্যাটি বেশ বড়। উদ্ধার কাজ চালানো হলেও সড়কপথ বন্ধ থাকায় প্রশাসনকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন, দুর্যোগের বিষয়ে তিনি সকাল ছয়টা থেকেই পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পাঁচটি জেলার প্রশাসনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। তিনি জানান, সোমবার বিকেলের মধ্যে তিনি নিজেই দুর্গত এলাকায় পৌঁছাবেন বলে আশা করছেন।
আটকে পড়া পর্যটকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা যেন আতঙ্কিত না হয়ে যেখানে আছেন সেখানেই অবস্থান করেন। হোটেলগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়া হয়।
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। মোদি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার উদ্ধার তৎপরতা, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ও পর্যটকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে রাজ্য সরকারকে সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার