অলটাইম নিউজ ডেস্ক
দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশে ফেরা এবং আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তার দেশে ফেরা নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যেই বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “ইনশআল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসবো।”
সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিজের ভূমিকা, আগামী নির্বাচনে বিএনপির কৌশল, জোট গঠন এবং দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়েও খোলামেলা কথা বলেন। বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন।
ফেরা এবং নির্বাচন
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও কেন ফেরেননি— এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, “কিছু সংগত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে উঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশআল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসবো।”
নির্বাচনের আগে ফেরার সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকবো? আমি তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে, সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে জনগণের সাথে জনগণের মাঝেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।”
আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে অংশ নেবে— এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত দলগুলোকে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে চায় বিএনপি।
তার ভাষায়, “কমবেশি সকলকে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।”
জামায়াতে ইসলামীর বিএনপি-বিরোধী জোট গঠনের ইঙ্গিতে কোনো উদ্বেগ আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “কোনও দল বা সমষ্টিগতভাবে কোনও দল যদি বাংলাদেশের যে আইন আছে, বৈধ আইন আছে, বাংলাদেশের যে সংবিধান এখনো যেটি আছে এই সবকিছুর ভেতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে তারা করতেই পারে। এটাতে তো কোনও সমস্যা বা উদ্বেগের কোনও কারণ আমি দেখি না।”
‘মাস্টারমাইন্ড গণতন্ত্রকামী জনগণ’
গত বছরের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে তাকে আখ্যা দেওয়া হলেও তারেক রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তিনি বলেন, “না। আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে আমি কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড কোনো দল কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।”
তিনি আন্দোলনে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, গৃহিণী থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাদের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, “এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন।”
মনোনয়ন, নেতৃত্ব ও পরিবার
আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে কৌশল কী হবে, জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সবসময় কমবেশি যা ছিল বা ভবিষ্যতে আমরা যেটিকে মূল্যায়ন করবো- সেটি হচ্ছে অবশ্যই কোনও একটি পার্টিকুলার এলাকা থেকে আমরা আমাদের দলের এমন একজন ব্যক্তিকেই নমিনেশন দিতে চাইবো, যে ওই এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন আছে, যার সাথে ওই এলাকার মানুষের সম্পৃক্ততা আছে।”
প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হবেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দেখুন আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না। এটি সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশের জনগণ।” তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, “জ্বি ইনশাআল্লাহ।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নির্বাচনে ভূমিকা রাখার বিষয়টি তার শারীরিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে বলে জানান তারেক।
বিএনপির নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাজনীতি পরিবারকরণ হয় না। এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। কাজেই যে অর্গানাইজ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে সে এগিয়ে যেতে পারবে।”
নিজের স্ত্রী বা কন্যার রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা নিয়ে তারেক রহমান বলেন, “সময় পরিস্থিতি বলে দিবে ওটা।”