রাজশাহীতে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে এই সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান দলীয় নেতা-কর্মীরা। ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর রুহুল আমিন টুনুকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, শুক্রবার রাত ৮টায় ওয়ার্ড কার্যালয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল এবং নির্বাচনী প্রচারণার জন্য সভা আহ্বান করা হয়। সভায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর দল থেকে সদ্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা নেতা টুনুসহ রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রকিব উদ্দিন টুটুল এবং তাঁর অনুসারীরা সভায় টুনুর উপস্থিতি মেনে নিতে পারেননি। টুটুল ও তাঁর অনুসারীরা দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে টুনুকে সেখান থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁকে টুটুলের অনুসারীরা গালাগাল করেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। দলীয় কার্যালয়ের দরজা ভাঙচুর করে টুটুলের অনুসারীরা।
একপর্যায়ে টুনু এবং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব রুবেলের সমর্থকদের প্রতিরোধে সভাপতি টুটুলের অনুসারীরা ওয়ার্ড কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান। এরপর দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় পরপর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। তবে সংঘর্ষে কেউ গুরুতর আহত হয়নি বলে দলের নেতা-কর্মীরা জানান।
টুটুল এবং তাঁর অনুসারীদের বক্তব্য, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকালে টুনু কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। দলটির সকল সুবিধা নিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবার বিএনপিতে এসেছেন। দলের দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে না থেকে নিজের আখের গুছিয়েছেন। টুনু বসন্তের কোকিল। দলের যেসব নেতা-কর্মী টুনুর কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন, এখন তাঁরা তাঁর পক্ষ অবলম্বন করছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রুহুল আমিন টুনু বলেন, ‘সভা চলাকালে টুটুলের নেতৃত্বে আসা কয়েকজন আমাকে দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এই ওয়ার্ডে আমি বিএনপির নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ১০ বছর কাউন্সিলর ছিলাম। আমি আওয়ামী লীগে যোগ দিইনি। সাবেক সিটি মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন আমাকে জোর করে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন। আমার নামে ১১টি মামলা ছিল। আমি সব সময় বিএনপিকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি।’
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুবেল বলেন, ‘কোনো ধরনের কারণ ছাড়া সভাপতি টুটুল এবং তাঁর সমর্থকেরা ওয়ার্ড কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন। আমরা কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য রাজপাড়া থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ধরেননি। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিস্ফোরিত ককটেলের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আওয়ামী লীগ শাসনামলে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি-সমর্থিত ১৭ কাউন্সিলরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। রাজশাহী-২ (সদর) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু সম্প্রতি তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য দলের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে সুপারিশ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ নভেম্বর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক চিঠিতে তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেন।