Connect with us

রাজনীতি

পিআর দাবিতে মাঠে জামায়াত-সহ সাত দল, কতটা দাবিপূরণের পথে?

নতুন বাংলাদেশ গঠনে জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন। পাঠিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। তবে পিআর পদ্ধতি সহ গণ-অধিকার পরিষদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী সাংসদে ও নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতি চায়।

জামায়াত ইসলামী-সহ সাত দলের বিক্ষোভ:

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সাতটি দল রাজধানীতে একযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী বলেছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার বিষয়ে সফলতা আসছে না বলেই তারা মাঠের কর্মসূচিতে গেছে। ইসলামী আন্দোলন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন প্রশ্নে ‘গণভোট’ দাবি করে বলেছে, জনগণ না চাইলে তারা এ দাবি থেকে সরে যাবে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিজয়নগর এলাকায় সাত দলের এই বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়। বিক্ষোভকারী অপর দলগুলো হলো, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও খেলাফত আন্দোলন।একই দাবিতে শুক্রবার সারা দেশে সব মহানগরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে।

দলগুলোর দাবি— জামায়াত-সহ কয়েকটি দল দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সাথে আলোচনা করে আসছিলেন। তবে টেবিলে তাদের দাবিদাওয়া পূরণ না হওয়ায় মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছে। জুলাই সনদ ও পিআর পদ্ধতি নাকচ করে বিএনপি একতরফা নির্বাচনে যেতে চায়।

আন্দোলনে নেই এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ ও এবি পার্টি:

জামায়াত তার ভাষায়– জুলাই সনদের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন দলকে নিয়ে একটি জোট গড়ার চেষ্টা করছে।রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে একটা ‘শোডাউনেরও’ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে।

তবে এখনো যুগপৎ মডেলে কোনো কর্মসূচিতে যেতে আগ্রহ দেখায়নি এনসিপি। যদিও শুরু থেকেই ইসলামী বিভিন্ন দল এবং এর বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় সম্পৃক্ত ছিল এই দলটি। দলটি উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চাইলেও নিম্নকক্ষে আগের মতো নির্বাচন চান।

জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ৫ দফা দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছে। দাবিগুলো হলো— জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারী শক্তির দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ।

এই দাবিগুলো আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ১৮, ১৯ ও ২৬ সেপ্টেম্বর তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের যৌথ উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি করেছে সংগঠনটি। তবে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি আদায় করতে পারবে কিনা প্রশ্ন উঠেছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। সেখানে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলমান অবস্থায় কেন জামায়াত মাঠের কর্মসূচিতে গেল, তার ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘আলোচনার টেবিলে যাচ্ছি, কিন্তু সে আলোচনায় সফলতার মুখ দেখছি না। মনে হয়, কোনো চাপের মধ্যে পড়ে সরকার একটি শুভংকরের ফাঁকির দিকে যাচ্ছে।’

এই আন্দোলনকে ‘রাজনীতির অংশ’ উল্লেখ করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘এই আন্দোলন জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য।’ সমাবেশে পিআরের পক্ষে গণভোটের দাবি করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি, গণভোট দিন। জনগণ যদি পিআর মানে, তো আপনাদেরও (অন্তর্বর্তী সরকার) মানতে হবে। আর জনগণ যদি বিপক্ষে যায়, আমরা জামায়াতে ইসলামী তা মেনে নেব।’

বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে নির্বাচন হলে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে উল্লেখ করে পরওয়ার বলেন, ‘সংস্কার যদি এখন না হয়; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যগুলো ঠিক করার জন্য যত সংস্কার, তা যদি নির্বাচনের আগে না হয়; বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে যদি আবার নির্বাচন হয়, তাহলে এই কাঠামোতে আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। বাংলার মানুষ আর ফ্যাসিবাদ জন্ম হতে দেবে না।’

এই যুগপৎ কর্মসূচি বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আন্দোলন হবে কি-না শঙ্কায় রাজনীতিবিদরা। কথার উত্তাপ আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাবে কারো জানা নেই। এদিকে আলোচনার টেবিল থেকে মাঠে নামাটা ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করছে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু বলেন, ‘আন্দোলনের নামে আমি তো চাইলে রাস্তা অবরোধ করতে পারবো না৷ মবক্রেসি করতে পারি না৷ কেউ যদি রাস্তায় নেমে জোর করে চাপিয়ে দিতে চায় তাহলে জনগণের উপর আস্থার অভাব।’

পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক উত্তাপ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘সবাই চাচ্ছে আর আপনি চাচ্ছেন না এটা কেমন সংস্কার? আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটা বাংলাদেশে আর হবে না। আমরা জনগণের পক্ষে আন্দোলন করতেছি। এখানে সংঘাত-ক্লেশ হবে কেন? এখনও কি স্বৈরাচার মাঠে আছে?’

বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করিম বলেন, ‘টেবিলে সমাধান করতে পারেনি। জনগণ কী চায় তা তারা বুঝতেছে না। যদি ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারেন, তাহলে গণভোট দেন। ডিসাইড করবে জনগণ— তারা পিআর চায় কি চায় না।’

এদিকে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাতকারে গণঅধিকার পরিষদের নেতা রাশেদ খান মন্তব্য করেন, ‘যুগপৎ আন্দোলন নামে আমরা বিভক্ত হয়ে গেলে আবারো ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে পারে।’

এদিকে রাজপথে জবাব দিতে প্রস্তুত না বিএনপি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন গোছানোর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি।

পিআর পদ্ধতির সুবিধা-আসুবিধা:

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতিতে যেসব সুবিধা রয়েছে তা হচ্ছে:

১. অসংখ্য রাজনৈতিক দলের এ দেশে বহু মত-পথ থেকে ভোটারদের কাছে যাওয়া হয়। অতীতের নির্বাচনগুলোতে আট-দশটির বেশি দল সংসদে যেতে পারেনি। হয়তো কোনো দল ৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে কিন্তু আসন একটিও পায়নি। কিন্তু পিআর পদ্ধতি হলে ৯টি আসন পেতে পারত। সুতরাং পিআর পদ্ধতি ছোট দলগুলোর সংসদে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। লক্ষণীয়, কোনো কোনো ছোট দলে বড় মাপের দু’-একজন নেতা দেখা যায়। পিআর পদ্ধতি হলে ছোট ছোট দলের একাধিক নেতা সংসদে স্থান পাবেন। তাতে সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব যেমন বাড়বে, তেমনি সংসদে মানসম্মত নেতারা যেতে পারবেন।

২. বর্তমান পদ্ধতিতে একটি আসনে যদি পাঁচজন প্রার্থী থাকেন, তার মধ্যে একজন ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েও বিজয়ী হতে পারেন। তার মানে তিনি ৭৫ শতাংশ ভোটারের সমর্থন ছাড়া নির্বাচিত হয়েছেন। পিআর পদ্ধতি এ দিক থেকে অধিকতর প্রতিনিধিত্বশীল।

৩. বর্তমান পদ্ধতিতে প্রার্থীরা যেকোনো আঞ্চলিক ইস্যুতে আবেগ ছড়িয়ে দিয়ে বা কালো টাকা ব্যবহার করে সুইং ভোটারদের মন জয় করতে পারেন। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ কোনো প্রার্থী থাকেন না বিধায় বিশেষ কোনো ইস্যু নিয়ে জোয়ার সৃষ্টি করার সুযোগ পাবেন না। ভোটারদের নিজ নিজ দলের এবং জাতীয় বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

৪. বর্তমানে দেশের সংসদ সদস্যরা এলাকার বিচার সালিস থেকে শুরু করে ছোটখাটো উন্নয়নমূলক কাজেও হস্তক্ষেপ করে থাকেন। তারা বিভিন্ন কাজে মন্ত্রণালয়ে তদবির কাজে ব্যস্ত থাকেন। অথচ তাদের প্রধান কাজ দেশের জন্য আইন প্রণয়ন করা। আইন প্রণয়নে যথেষ্ট পড়াশোনা ও যোগ্যতা থাকতে হয়। পিআর পদ্ধতিতে কোনো সংসদ সদস্য যেহেতু নির্দিষ্ট কোনো এলাকার প্রতিনিধিত্ব করবেন না, সেহেতু তারা আইন প্রণয়নে অধিকতর সময় ব্যয় করতে পারবেন। এতে করে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করতে স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা বা জেলা পরিষদ অধিকতর সক্রিয় হয়ে উঠতে পারবে।

৫. আমাদের সংস্কৃতিতে যার ভোটে প্রার্থী জিততে পারেন না তার ভোট মূল্যহীন গণ্য করা হয়। পিআর পদ্ধতিতে কোনো দল কমপক্ষে ১ শতাংশ ভোট পেলেও দলটি সংসদে তিনটি আসন পাবে। ফলে ছোট ছোট দলকে যারা ভোট দিয়েছেন তাদের ভোটটি নষ্ট হয় না বলে বিবেচনা করা হয়।

৬. বিদ্যমান ব্যবস্থায় কোনো নির্বাচনী এলাকার কয়েকজন প্রার্থী থাকলে একজন ন্যায়নিষ্ঠ ভোটার তাদের কাউকে পছন্দ নাও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তিনি হয়তো ‘না’ ভোট দিতে পারবেন, কারণ তার কাছে আর কোনো অপশন থাকে না। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে একটি দলের অনেক প্রার্থীর কারণে তিনি কোনো একটি দলকে বেছে নিতে পারেন। অর্থাৎ- তার ভোট দেয়ার জন্য বৃহত্তর অপশন থাকে।

৭. বিদ্যমান ব্যবস্থায় একজন প্রার্থী জয়লাভে মরিয়া হয়ে উঠেন এবং বিশাল বাজেট (যা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না), পেশিশক্তি দিয়ে ভোটারদের ভয় দেখানো, ভোটকেন্দ্র দখল, অনৈতিক আচরণ ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। কিন্তু পিআর পদ্ধতি হলে যেহেতু ব্যক্তি মুখ্য থাকে না, সেহেতু তিনি দলের হয়ে ততটা মরণপণ করবেন না। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

৮. বিদ্যমান দু-একটি দল প্রভাবশালী হওয়ায় নির্বাচনকালে অধিকতর সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। কিন্তু পিআর পদ্ধতি হলে ছোট-বড় সব দল সমান সুবিধা পাবে।৯. বিদ্যমান ব্যবস্থায় একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি দলীয় মনোনয়ন লাভে অর্থ ব্যয় করেন (অনেক দলের ক্ষেত্রে এটি সত্য)। কিন্তু পিআর পদ্ধতি হলে অর্থ ব্যয়ে মনোনয়ন লাভের আগ্রহ কমে যেতে পারে।

১০. অনেকে যুক্তি দিয়ে থাকেন, পিআর পদ্ধতিতে কোনো দলের পক্ষে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়া সম্ভব হয় না বিধায় কোয়ালিশনের বিকল্প থাকে না; ফলে সরকার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। বিষয়টি ইতিবাচকভাবেও দেখা যেতে পারে। সেটি হচ্ছে- কোয়ালিশন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সুযোগ করে দিতে পারে। একটি দেশের সব মত-পথকে সমান মর্যাদা দিতে হবে।

১১. বিদ্যমান ব্যবস্থায় কোনো একটি জেলা বা উপজেলার দোহাই দিয়ে আঞ্চলিকতার সুর তুলে ভোটারদের মন জয় করা যেতে পারে। যেমন- রংপুরের ভোটাররা একসময়ে জেনারেল এরশাদকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতেন। কিন্তু তার দল অন্য জেলায় ভালো ভোট পেত না। আবার কোনো দল গোপালগঞ্জের বা পার্বত্য চট্টগ্রামের দোহাই দিয়ে কয়েকজন প্রার্থী জিতিয়ে আনতে পারে। পিআর পদ্ধতি হলে সেটি সম্ভব হবে না। জার্মানিতে ১৯৪৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত একাধারে ৫০ বছরের মধ্যে আট বছর ছাড়া ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি কোয়ালিশন করে ক্ষমতায় ছিল, যদিও কখনো ১২ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি।

পিআর পদ্ধতির অসুবিধাগুলো কী কী:-

১. পিআর পদ্ধতির অসুবিধাগুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে কোয়ালিশন সরকারের স্থিতিশীলতা থাকে না। সে জন্য সরকার কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে না। আমাদের দেশে রাজনৈতিক বিভাজন এত বেশি যে, কোয়ালিশন সরকারের কতটা স্থিতিশীল থাকবে তা বলা কঠিন। যদিও নির্বাচনী জোট গঠনের সুখকর উদাহরণ একাধিক রয়েছে।

২. পিআর পদ্ধতি যদিও ছোট দলগুলোকে সুবিধা দেয় কিন্তু কোনো উগ্রবাদী দল যদি সরকার গঠনে অপরিহার্য হয়ে উঠে সে ক্ষেত্রে বেশি ভোট পাওয়া দলটির জন্য বিপদ হয়ে যেতে পারে। উগ্রবাদীদের চাপে সরকার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে সরকার বাধ্য হতে পারে।

৩. পিআর পদ্ধতি যদিও কোয়ালিশন সরকারের প্রবণতা নিশ্চিত করে, সমধর্মী পার্টিগুলো যদি একত্র হয়ে সরকার গঠন করে, সে ক্ষেত্রে ক্ষমতা আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে।

৪. পিআর পদ্ধতি ছোট দলগুলোকে আরো সুবিধা দেয়, এরা সরকার গঠনে অপরিহার্য শক্তি হয়ে উঠতে পারে। ফলে নির্বাচকমণ্ডলীর একটি ক্ষুদ্র অংশ দেশের বৃহত্তর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনুঘটকের কাজ করতে পারে।

৫. বিদ্যমান পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচিত সদস্য যদি কোনো ভুলত্রুটি করেন বা জনগণের চাহিদা/দাবি পূরণে ব্যর্থ হন, তাহলে ভোটাররা পরবর্তী নির্বাচনে আর ভোট দেবেন না। কিন্তু পিআর পদ্ধতির একটি বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, প্রার্থী কোনো বিশেষ এলাকার না হওয়ায় ব্যর্থ সংসদ সদস্যের প্রতি অনাস্থা দেয়ার সুযোগ থাকে না। কারণ তিনি ব্যক্তি হিসেবে নন, দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচিত হন।

৬. ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোট হয়ে আসছে। পিআর পদ্ধতি কারো কাছে বেশ জটিল মনে হতে পারে। এ জন্য ভোটার এবং নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রায়হান সুবহান পিআর পদ্ধতির অসুবিধা নিয়ে ফেসবুক স্টাটাসে লিখেন, পিআর সিস্টেমের একটা বড় অসুবিধা হলো-মুফতি আমীর হামজার মতো রিলিজিয়াস কাভারে রাতদিন বানোয়াট কথা বলা ব্যক্তিও এমপি হয়ে যেতে পারে। যারা এমন ব্যক্তিকে এমপি নমিনেট করলো তারা পিআর এ তাকে এমপি বানাতেও পারে।একজন এমপি -এর মূল কাজ কী? – Making laws or supporting them. এই দেশের ৫০%+ নেতা আইনের Definitionও জানে কি-না ডাউট আছে। আমাদের রাজনৈতিক সিস্টেম এমন এখানে অতীতে মমতাজ ও ভবিষ্যতে আমীর হামজারা আইন বানাবে এবং আইন অনুমোদন দিবে। যাহোক , ভালো থাকুন এবং ভালো রাখুন।’

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © 2025. powered by All Time News.