ঢাকা, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ — বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর উদ্ভূত জুলাই সনদ নিয়ে জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে এখন বিএনপি। কেন গণভোটেকে ভয় পাচ্ছে দলটি? তাহলে কি গণতন্ত্রের মূলধারা থেকে সরে আসছে দলটি! যখন বিনপির প্রতিষ্টাতা মেজর জিয়াউর রহমান নিজেই জনগণের উপর আস্থা রেখে ১৯৭৭ সালে গণভোটের আয়োজন করেন। অন্যদিকে বর্তমান বিএনপি নেতৃত্ব গণভোটের বিরোধিতা করছে। কি বা কার স্বার্থ থেকে তাহলে জুলাই সনদ এর বিপক্ষে যেতে হচ্ছে দলটিকে। অন্যদিকে ছাত্র জনতার আন্দোলনে অর্জিত বিপ্লব পরবর্তী নেতৃত্বাধীন দল এবং সম্প্রতি আপামর জনতার কাছে হটাৎ জনপ্রিয় হয়ে উঠা দল জামাতে ইসলামী বিশেষ রাজনৈতিক চালের মাদ্ধমে ছাত্র জনতার এই আন্দোলন কে পুঁজি করেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বিনপি এর সামনে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: জিয়াউর রহমানের গণভোট ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে আয়োজিত গণভোট ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি ছিল জনগণের মতামতের ভিত্তিতে নেতৃত্বের বৈধতা অর্জনের প্রয়াস। সেই সময় বিএনপি গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
জুলাই সনদ ও বর্তমান অবস্থান
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গঠিত জাতীয় ঐক্য কমিশন প্রণয়ন করে জুলাই সনদ, যেখানে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবনা রয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদসীমা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল, এবং সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব। বিএনপি প্রাথমিকভাবে সনদে স্বাক্ষর করলেও পরে অভিযোগ তোলে যে তাদের মতামত উপেক্ষিত হয়েছে এবং তারা নির্বাচনের আগে একক গণভোটের বিরোধিতা করে। বিএনপির দাবি, একক গণভোট হলে তা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা বিঘ্নিত হতে পারে। তারা চায় একইসাথে নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হোক।
রাজনৈতিক কৌশল ও চাপ
বিএনপির এই অবস্থান কেবল নীতিগত নয়, বরং কৌশলগত। ছাত্র-জনতার আন্দোলন থেকে গঠিত নতুন দল এবং জামায়াতে ইসলামী—উভয়ই জুলাই সনদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। জামায়াত ইতিমধ্যে গণজমায়েত ও প্রচারণা চালিয়ে জনগণের সমর্থন আদায় করছে এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে বিএনপির প্রচলিত ভোটভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করছে।
গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন
বিএনপির গণভোট বিরোধিতা তাদের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গণভোটে ভয় দেখানো বা বিলম্ব ঘটানো জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে। ব্যবসায়ী মহলও দ্রুত নির্বাচন ও গণভোটের দাবি জানিয়েছে, যাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও জামায়াতের চ্যালেঞ্জ
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ঐতিহাসিক জোট থাকলেও বর্তমানে মতবিরোধ প্রকট। জামায়াত ১৯৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে বিএনপির সমালোচনার মুখে পড়েছে এবং এখন তারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে।
নেতৃত্বের পরীক্ষায় বিএনপি
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মুখোমুখি। তারা কি গণতন্ত্রের প্রতি তাদের ঐতিহাসিক অঙ্গীকার রক্ষা করবে, নাকি রাজনৈতিক কৌশলের কারণে গণভোট থেকে পিছিয়ে যাবে?