জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শাপলা প্রতীকের অনড় দাবির মুখে পিছু হটল নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এনসিপির দাবি কয়েকবার প্রত্যাখ্যান করার পর শেষমেশ প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করল এএমএম নাসির উদ্দিনের নির্বাচন কমিশন।
বৃহস্পতিবার তালিকায় এ প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সমনে রখে এনসিপিসহ দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে এনসিপিকে তফসিলে থাকা ৫০টি প্রতীকের মধ্যে থেকে মার্কা বেছে নিতে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে চিঠি দেয় ইসি।
নির্ধারিত সময়ে এনসিপি প্রতীক বেছে না নিয়ে বিধি সংশোধন করে শাপলা প্রতীকের দাবি তোলে।
কিন্তু ইসির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়, প্রতীক তালিকায় না থাকায় এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়া সম্ভব নয়।
এর মধ্যে এনসিপি নেতারা হুঁশিয়ারি দেন, তারা শাপলা প্রতীকেই ভোট করবেন এবং এই প্রতীক না পেলে তারা নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবেন।
গত রোববার কিশোরগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “শাপলা প্রতীকের জন্য যদি এনসিপিকে রাজপথের কর্মসূচিতে যেতে হয়, তাহলে এনসিপি একই সঙ্গে এই স্বেচ্ছাচারী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের আন্দোলনেও যাবে।”
সারজিসসহ এনসিপি নেতাদের এমন অনড় অবস্থান এবং রাজপথে নামার হুঁশিয়ারির মধ্যে বৃহস্পতিবার প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা কলি’ যুক্ত করল নির্বাচন কমিশন।
এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রতীক তালিকা সংশোধন করে ১১৫টি নির্ধারণ করা হয়। সেবার প্রতীক সংখ্যা বাড়ালেও তাতে শাপলা ছিল না।
এবার আগের তালিকা থেকে ১৫টি বাদ ও নতুন ১৯টি যোগ হওয়ায় প্রতীক সংখ্যা দাঁড়াল ১১৯টি। নতুন তালিকায় শাপলা কলি, সিঁড়ি, হ্যান্ডশেক ও সূর্যমুখীসহ যোগ হয়েছে ১৯টি প্রতীক।
১৫ টা বাদ ১৯ টা নতুন প্রতীক যুক্ত করা হয়েছে
নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানান, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে। কিছু প্রতীক নিয়ে বিরূপ মন্তব্য থাকায় ১৫টা বাদ দিয়ে নতুন আরও ১৯টা যোগ করে ১১৯টা প্রতীক তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে শাপলা কলি রয়েছে।
সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, “এটা কারো কোনো দাবির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক নয়। একটি দল শাপলা চেয়েছে। শাপলা ও শাপলা কলির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, এটার ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে না।”
এখন কোনো দল এভাবে প্রতীক দাবি করলে করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। “কিন্তু সেটা কমিশনের বিবেচনায় নিলে নিতে পারে, সেটা সময়ের ব্যাপার।”
কিসের ভিত্তিতে তালিকা সংশোধন ও শাপলা কলি যুক্ত করা হয়েছে জানতে চাইলে সচিব বলেন, “কিছু প্রতীকের বিষয়ে বিরূপ মতামত এসেছে। সে বিষয়গুলো কমিশন মনে করেছে সংশোধন করা দরকার, সংশোধন করেছে। প্রেক্ষাপটটা হল, বিরূপ সমালোচনার পর কিছু বিয়োজন ও সংযোজন করেছে।”
ইসি ‘স্বৈরাচারী আচরণ’ করছে- এনসিপির এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোনো দলের বক্তব্যে মন্তব্য করা উচিত নয়। এটা ইসি সচিবের এখতিয়ারাধীন নয়।
“কে চেয়েছে না চেয়েছে সেটা বিষয় নয়, কমিশন মনে করেছে আরও কিছু প্রতীক যুক্ত করা দরকার, কমিশন করেছে।”
ভবিষ্যতে প্রয়োজন মনে করলে ইসি আবারও সংশোধন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইসি কোনো চাপে তালিকা সংশোধন করেছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, “এটা কোন বিবেচনায় করেছে, এটা ইসির এখতিয়ার। নতুন করে বিতর্কের যৌক্তিক কারণ নেই। কমিশন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। না হলে কেন সংশোধন করেছে! স্বাধীনতা আছে বলেই সংশোধন করেছে।”
এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা শাপলা কলি প্রতীক নেবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, “এ ব্যাপারেও আমার বক্তব্য নেই। কারো নেওয়া না নেওয়ার ব্যাপারটা তাদের। যদি নিয়ে কোনো প্রশ্নের জবাব দেব না।”
বাদ হল যে ১৫ প্রতীক, যুক্ত হল ১৯ প্রতীক
আগের ১১৫টির তালিকা থেকে উটপাখি, কলা, খাট, চার্জার লাইট, টিফিন ক্যারিয়ার, তবলা, তরমুজ, ফুলের টব, ফ্রিজ, বাঁশি, বেঞ্চ, বেগুন, লাউ, শঙ্খ ও স্যুটকেস বাদ দেওয়া হয়েছে।
আর যুক্ত করা হয়েছে উট, চিরুনী, টর্চলাইট, টেবিল ল্যাম্প, ট্রাক্টর, ড্রেসিং টেবিল, তালা, দোতলা বাস, পাগড়ী, পানির ট্যাপ, পালকি, ফলের ঝুড়ি, বেরি ট্যাক্সি, বৈদ্যুতিক বাল্ব, মটরসাইকেল, রেল ইঞ্জিন, সিড়ি, সূর্যমুখী ও হ্যান্ডশেক।