Connect with us

ক্যাম্পাস

রাকসু নির্বাচন: ‘ঐক্য’ ভেঙে জুলাই আন্দোলনের ৯ সমন্বয়ক লড়ছেন ৫ প্যানেলে, ১ জন স্বতন্ত্র

প্রান্ত কুমার দাশ, রাবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন সামনে রেখে ভেঙে গেছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র আলোচিত সমন্বয়ক কমিটির ঐক্য। একক প্যানেলের গুঞ্জন ছাপিয়ে কমিটির ৯ সদস্যই অন্তত পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন প্যানেল থেকে ও একজন স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের কারণে এই বিভক্তি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় ১৭ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটি। ৫ আগস্টের পরে এই সময়ন্বক কমিটির সদস্যরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ধারণা করা হচ্ছিল, আসন্ন রাকসু নির্বাচনে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কোনো প্যানেল দেবেন। তবে তফসিল ঘোষণার পর সেই ধারণা পাল্টে যেতে থাকে।

শুক্রবার পর্যন্ত ক্যাম্পাসে মোট ৯টি প্যানেল আত্মপ্রকাশ করেছে, যার পাঁচটিতেই গুরুত্বপূর্ণ পদে লড়ছেন সাবেক এই সমন্বয়করা।

কে কোন প্যানেলে

গত রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে বিভিন্ন প্যানেলের ঘোষণা আসতে থাকে। ওই দিন ছাত্রদল দুপুরে প্যানেল ঘোষণা করে। বিকেলে করে ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবিরে চমক ছিল সাবেক সমন্বয়ককে নিজেদের প্যানেলে এনে ঘোষণা করা। এই প্যানেলে জিএস পদে চমক হয়ে আসেন সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা। ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলকে ছাত্রশিবির ‘ইনক্লুসিভ’ বলে আসছে।

তিন জন সমন্বয়কের নেতৃত্বে গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ নামে আরেকটি প্যানেল এসেছে। এই প্যানেলের ভিপি হয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব, জিএস পদে আছেন আরেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার, এজিএস পদে আছেন আকিল বিন তালেব। 

গতকাল (১১ সেপ্টেম্বর) বৃহস্পতিবার ‘সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদ’ নামে আরেকটি প্যানেলের আত্মপ্রকাশ হয়। এতে সাবেক দুই সমন্বয়ক রয়েছে। এই প্যানেলে রাকসুর ইতিহাসে প্রথম নারী ভিপি প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক তাসিন খান। প্যানেলে মাহাইর ইসলাম হয়েছে এজিএস প্রার্থী।  

‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’ নামে গত সোমবার আরেকটি প্যানেল আসে। এখানে সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী মারুফ ভিপি প্রার্থী হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকারের পরিষদেও বর্তমান সভাপতি। গত মঙ্গলবার আত্মপ্রকাশ ঘটে  ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ নামে আরেকটি প্যানেলের। এখানে ভিপি পদে লড়বেন সাবেক সমন্বয়ক ফুয়াদ রাতুল। ফুয়াদ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বর্তমান আহ্বায়ক। 

এদিকে মো. আতাউল্লাহ নামে সাবেক সমন্বয়ক পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পদক পদে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি এখন পর্যন্ত কোনো প্যানেলে যুক্ত হননি। 

আরেক সাবেক সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম (শহিদ) নবাব আব্দুল লতিফ হলে ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘নবাবীয়ান ঐক্যজোট’ প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচন করছেন। 

এ ছাড়া ছাত্রত্ব না থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান (মুন্না), গোলাম কিবরিয়া মো. মিশকাত চৌধুরী, মাসুদ রানা, মো. নওসাজ্জামান, তানভীর আহমেদ রিদম।

সাইবার বুলিং ভয়ে নির্বাচনে আসেননি দুই নারী সমন্বয়ক

ক্যাম্পাসে পরিচিতি ও ছাত্রত্ব থাকার পরও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না সমন্বয়ক কমিটির দুই নারী সদস্য ফৌজিয়া নৌরিন ও অহনা মৃত্তিকা। জুলাই আন্দোলনের পর থেকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া এবং নির্বাচনের ‘পরিবেশ না থাকাকে’ কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা।

এ বিষয়ে ফৌজিয়া নৌরিন বলেন, ‘আন্দোলনের পর থেকে বিভিন্ন ধরনের বাজে মন্তব্য ও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছি, যা একজন মেয়ে হিসেবে সহ্য করা কষ্টকর। নির্বাচনে অংশ নিলে আবার এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। প্রশাসন এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

একই ধরনের আশঙ্কার কথা জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী অহনা মৃত্তিকাও। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীরা মিছিলের সামনের সারিতে ছিল। কিন্তু আন্দোলনের পর আর নারী শিক্ষার্থীদের কেউ পাশে রাখেনি বা মনে রাখেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শুরু করে ছাত্র সমন্বয়করা আমাদের নারীদের অবদান সেভাবে তুলে ধরেননি। সেই সঙ্গে নারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সাইবার বুলিং করা শুরু হলো। আন্দোলনের সময় এসব কথা কোথায় ছিল? এ জায়গায় আমি কাজ করার মনোভাব হারিয়ে ফেলেছি। এ ছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা ও সাইবার বুলিংয়ের শঙ্কায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।’

Copyright © 2025. powered by All Time News.