ইবি প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় স্বচ্ছতা এবং ফ্যাসিস্টমুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে ইবির ক্রিয়াশীল সকল রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বেলা ১১টায় পরীক্ষার কেন্দ্রে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পরবর্তীতে নিয়োগ পরীক্ষা ছাত্রলীগ মুক্তকরণের দাবীতে কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ করেন ছাত্রদল কর্মীগণ।
কেন্দ্র থেকে বের হয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন। ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি নুর আলম বলেন, আওয়ামী-ফ্যাসিস্ট বিগত সময়ে নিয়োগ বোর্ডে ভিন্ন মত খুব কঠোরভাবে দমন করে পরীক্ষায় বসার পর্যন্ত সুযোগ প্রদান করেনি। আমরা মনে করি, যেহেতু ছাত্রলীগ এখন একটি নিষিদ্ধ সংগঠন অতএব তাদের কেউই যেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে। যদি কোন ছাত্রলীগকে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবো।
এসময় ইবির সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, আমার অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগেই জানিয়েছি। শুধু এই বোর্ড নয়, গণহত্যায় জড়িতদের পুরো ক্যাম্পাস জীবন সংকুচিত করে দেয়া হোক। তারা যে একটা গণহত্যার অংশীদার এটা তাদের বুঝতে দেয়া হোক। তাই শুধু এই বোর্ড না গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তদের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাদের সকলের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ইবি ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, দুইটি জায়গায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগেও বলেছি এবং এখনো দাবি করছি। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও স্বচ্ছতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। নিয়োগ হতে হবে সম্পূর্ণ ফ্যাসিস্টমুক্ত। আর এই দুটি বিষয়কে যদি প্রশাসন গুরুত্ব না দেয়, তাহলে অবশ্যই সেখানে আমাদের প্রতিক্রিয়া থাকবে। শুধু আমরা নই বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিক্রিয়া থাকবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ইবি শাখার আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেছেন, গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ড পরীক্ষা ছিলো, যেখানে রাকিবুল নামের ছাত্রলীগের একজন চিহ্নিত কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের অর্থ এবং অস্ত্রের যোগানদাতা ছিলেন। আমরা গতকাল রাতে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে তার উত্তীর্ণ হওয়ার ফলাফল দেখেছি। আমার মনে হয় শিগগির ছাত্রলীগ পুনর্বাসন করা হচ্ছে এবং তা ছাত্রলীগ সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই তা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আজকে ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাতেও ছাত্রলীগ রয়েছে তা আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগে জানিয়েছি। কিন্তু তারপরও প্রশাসন পরীক্ষা নিচ্ছে। প্রশাসন ছাত্রলীগ পুনর্বাসন করছে এবং ফ্যাসিজম কায়েম করছে। যারা শোকজ হয়েছে তাদের কোন তদারকি ছাড়াই কার্ড দেয়া হয়েছে, বিভাগের চেয়ারম্যানও এর সাথে জড়িত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি করা দুজন ভাই ওয়ালী উল্লাহ- মুকাদ্দাস গুম হয়েছে এবং ইবি শিক্ষার্থী সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে। প্রশাসন এসব বিষয়ের সমাধান না করলেও, ছাত্রলীগ পুনর্বাসনের কাজ ঠিকই করছে।
নিয়োগ বোর্ড এবং পরীক্ষায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার বিষয়ে আশ্বস্থ করে ইবি উপাচার্য ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, এখানে ছাত্র হিসেবে মেধার ভিত্তিতে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে, তারা পরীক্ষা দিচ্ছে। রাজনৈতিক দল নয়, পরীক্ষার দেয়ার সুযোগ সবাই পাবে। আমি কালকে বলেছি। ইনশা-আল্লাহ এবারের শিক্ষক নিয়োগে অতীতের যত বদনাম ছিলো; মেধার ভিত্তিতে হয় নাই, যোগ্যতা নাই, আমি বিশ্বাস করি সেসব বদনাম গোছাবে। নিয়োগের বৈধতা- অবৈধতা তোমরাই বিবেচনা করতে পারবে।
গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই প্রথম নিয়োগ বোর্ড এবং প্রথমেই ফ্রেশ নিয়োগ হতে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ইউজিসি থেকে ছয়টি পদে অর্থছাড়ের সিদ্ধান্তের পর গত ৩ আগস্ট নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ছয়টি বিভাগে একটি করে প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বিজ্ঞাপিত বিভাগগুলো হলো— ল’ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম, ফোকলোর স্টাডিজ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট।