ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ ও সোচ্চার-এর যৌথ উদ্যোগে ‘Dissemination of the UN Human Rights Office Fact-Finding Report’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি বাস্তবায়ন করে সোচ্চার স্টুডেন্টস’ নেটওয়ার্ক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপ্টার।
শনিবার (৮ নভেম্বর) দিনব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে আয়োজিত এ সেমিনারে জুলাই বিপ্লবের উপর জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদন এবং জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের ঘটনাবলির মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বাস্তবতা, তথ্য, বিশ্লেষণ ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে সোচ্চার স্টুডেন্ট’স নেটওয়ার্ক ইবি শাখার সভাপতি রাহাত আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ও সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুস সবুর, আল কুরআন বিভাগের সভাপতি নাছির উদ্দিন মিঝি ও অধ্যাপক ড. এবিএম জাকির হোসেন, আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. তোজাম্মেল হোসেন, সহকারী প্রক্টর ও সোচ্চারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের গর্ভনেন্স বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র মানবাধিকার কর্মকর্তা জাহিদ হোসাইন। এছাড়া অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর এবং সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশের লিগ্যাল সাপোর্ট ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ব্যারিস্টার শাইখ মাহদি, সোচ্চার টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশের প্রজেক্ট ম্যানেজার ও কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সুমাইয়া তামান্না, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও সোচ্চার ট্রমা ম্যানেজমেন্ট ও সাপোর্ট ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক সুমাইয়া তাসনিম। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের গর্ভনেন্স বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র মানবাধিকার কর্মকর্তা জাহিদ হাসান জাতিসংঘ কী, কেন ও কিভাবে কাজ করে বিষয়গুলো উল্লেখ করে বলেন, জাতিসংঘ সারাবিশ্বে শান্তি, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবাধিকার লংঙ্ঘন হওয়া ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করেছে। এর ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
প্রতিবেদনে মানবাধিকার রক্ষায় ৫টি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। সুপারিশমালা হলো- জবাবদিহিতা ও বিচার বিভাগ নিশ্চিত করা, পুলিশ ও নিরাপত্তা বিভাগের অসামরিকীকরণ, নাগরিক পরিসর বৃদ্ধি, রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সুশাসন নিশ্চিত করা। এসকল সুপারিশ সরকার নিশ্চিত করতে পারলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে না।
জাতিসংঘের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং রিপোর্ট উপস্থাপনে সোচ্চারের সহযোগিতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, ‘আজকের সেমিনারের মাধ্যমে তোমরা জানতে পেরেছো বিগত স্বৈরশাসন কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এটি আমাদের আরও গভীরভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে। এটি আমাদের সচেতনতারও অংশ। আজকে জাতিসংঘের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তাদের রিপোর্ট তোমাদের সামনে উপস্থাপন করেছে মাত্র তবে সকলের কাজ এটি অধ্যয়ন করে নিজেদের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা। এটি নিয়ে বিভিন্ন অনুষদভিত্তিক কর্মশালা করার আহ্বান জানান তিনি।’