কক্সবাজারের পেকুয়ায় দুই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এতে বিয়ের উদ্যোগ ও অর্থায়নে সহায়তা করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের উপজেলা আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ। গত মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকাল ৩টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা বরের বাড়িতে এ বিয়ের আয়োজন হয়। এতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার মধ্যস্ততায় উভয় পরিবারের সম্মতিতে নানা আয়োজনের মধ্যে বিয়েটি সম্পন্ন হয়।
বর পূর্ব মেহেরনামা এলাকার মো. ছৈয়দ উল্লাহর ছেলে মোহাম্মদ জাহেদ উল্লাহ (৩৬) ও কনে উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ৩ নাম্বার ওয়ার্ডের ছমিউদ্দিনপাড়া এলাকার সিরাজুল করিমের মেয়ে সুমাইয়া জন্নাত (২১)। তারা দুইজন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী।
জানা গেছে, গ্রামের অন্য যুবকদের মতো করে বিয়ের ইচ্ছা ছিল জাহেদের; কিন্তু তিনি বিষয়টি সহজে কাউকে বুঝাতে পারছিলেন না। তার এমন শখের কথা শুনে এগিয়ে এলেন স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা। দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ের আয়োজন করেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে বরযাত্রীদের সঙ্গে মাথায় টুপি পড়ে গাড়ির সামনের সিটে বসে কনের বাড়িতে যান জাহেদ। পরে কনের বাড়ির লোকজন বরযাত্রীদের বরণ করেন। সেখানে কনেপক্ষের লোকজন তাদের আতিথেয়তা ও আপ্যায়ন শেষ করেন। সব শেষ করে বর যাত্রীরা কনে সুমাইয়াকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। পরে বরের বাড়িতে ১ লাখ টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ বলেন, কনে এবং বর দুইজনই পেকুয়া উপজেলার বাসিন্দা; তবে ইউনিয়ন ভিন্ন। তারা দুইজনে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। এছাড়া তাদের পরিবার অসহায়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে নিজে উদ্যোগ নিয়ে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করেছি।
তিনি আরও বলেন, তাদের থাকার মতো ঘরবাড়ি নেই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের একটি ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি এবং দ্রুত সময়ে তা করে দেব ইনশাআল্লাহ।
বরের বাবা ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, আমরা উভয় পরিবার আহসান উল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কারণ তার উদ্যোগে আমার ছেলের বিয়ে সম্পন্ন করতে পেরেছি। তাদের সংসার যেন সুখের হয় সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
এ বিষয়ে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কামরান জাদিদ মুকুট বলেন, প্রতিবন্ধীদের সমাজে বোঝা হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আসলে তারা বোঝা নয়। তাদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে তারাও আমাদের সম্পদ। দুই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীর বিয়ে দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও আমার সহযোদ্ধা আহসান উল্লাহ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার এমন কাজে সমাজের বিত্তবানদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মঈনুল হোসেন চৌধুরী বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কের এমন কাজে সমাজে মানুষের মন অনেকটা পরিশুদ্ধ হবে। কারণ সবাই কিন্তু এসব কাজ করতে পারে না। তার এমন কাজে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।