মহেশখালী উপজেলার কুতুবজুম তাজিয়াকাটা (আদর্শ গ্রাম) সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু এবং মাটি উত্তোলনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে তাজিয়াকাটা স্টুডেন্টস সোসাইটি ও স্থানীয় জনসাধারণ। শুক্রবার (২৭ জুন) বাদ জু’মা সাড়ে ৩ টায় আদর্শগ্রাম এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে তারা।
এসময় সংগঠনটির সভাপতি মুহিউদ্দীন মুহাম্মাদ যুবাইর এর নেতৃত্বে কুতুবজুমের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। স্টুডেন্টস্ সোসাইটির কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে তারা। এসময় “বালির গাড়ি চলবে না, চলবে না, চলবে না; অবৈধ ডাম্পার, চলবে না; ডাইরেক্ট একশান, এলাকাবাসীর একশন” ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
স্থানীয় সূত্র ও সরেজমিনে দেখা যায়, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আমল থেকে সক্রিয় একটি অবৈধ চক্র। দিবালোকে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন। সরকারি বসতভিটার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গ্রামটির পাশ দিয়ে তৈরি করা বালুর স্তুপ কেটে সাবাড় করে ফেলে চক্রটি। ফুটবল খেলার মাঠকে খালে রূপান্তরিত করে ফেলে প্রভাবশালী ওই চক্র। বসতবাড়ি সংলগ্ন তিনটা বড় বড় গর্ত করতে দেখা যায়। গ্রামের সেমি রোড় ব্যবহার করে বালুর ডাম্পার বা ট্রাক দিয়ে নিয়মিত বালু পাচার করায় এলাকার রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ৩নং ওয়ার্ড তথা তাজিয়াকাটার (কুয়েত পাড়া, আদর্শ গ্রাম, হরইঘোনা) লোকজনদের।
বালু উত্তোলনের সময়কার ফুটেজ
এসময় প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত বক্তারা বলেন, এলাকার বাহির থেকে এসে পেশিশক্তি ব্যবহার করে দিনরাত মানুষকে কষ্ট দিয়ে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন নির্বিকার। আমরা বারবার প্রশাসনকে অবহিত করার পরেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখি নাই। বালু পাচার চক্রটিকে প্রশাসনও কি ভয় পাচ্ছে নাকি তাদের সাথে লিয়াজু করে সুযোগ দিচ্ছে? প্রশাসনকে বলবো- আপনারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
সোসাইটির কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান
প্রতিবাদ সমাবেশে তাজিয়াকাটা স্টুডেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন হচ্ছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। এটা তো এমন না যে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে দিবালোকে অস্ত্র হাতে সন্ত্রাসী কায়দায় মহড়া দিয়ে বালু পাচার করে তা প্রতিহত করতে ব্যর্থ প্রশাসন।”
তাজিয়াকাটা স্টুডেন্ট সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও তাজিয়াকাটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক এবাদুল হক বলেন, “ গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে অবৈধ বালির ডাম্পার চলাচলের কারণে স্কুল মাদ্রাসা কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ এলাকার সাধারণ মানুষের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন বর্ষাকালে রাস্তা চলাচলে মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নলকুপের পানি লবণাক্ত হয়ে গেছে। এতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপে অবৈধ বালি উত্তোলন ও ডাম্পার চলাচল বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।”
মানববন্ধনে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তির অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলেও প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস পাননি। অবৈধ চক্রটির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। স্থানীয় সরকারের সাথে যোগসাজশে এমনটা সাহস পাচ্ছে বলে ধারণা তাদের। তাদের অভিযোগ মগকাটা, নয়া পাড়া ও চাঁদা কাটা সহ কিছু বাহিরের লোক এসবে জড়িত।
মাটি কেটে খালে পরিণত করা চিত্র
সংগঠনটির সভাপতি মুহিউদ্দীন মুহাম্মাদ যুবাইর বলেন, “একটা গ্রাম পুরোটায় বসবাস অনুপযোগী হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পরিবেশ। বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে এটা কখনও সহ্য করা মতো না। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেন তাহলে ছাত্র সমাজ ও এলাকাবাসী কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।”